অ্যাজমা বা হাঁপানি কি ? কেন হয় ও করণীয় ?
অ্যাজমা বা হাঁপানি কি ?
সারাবিশ্বের প্রায় ১০ কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে সমীক্ষা অনুসারে এক কোটি ২৬ লাখ মানুষ হাঁপানিতে ভুগছেন । এর মধ্যে ৪০ লক্ষ শিশু। যে কোনো বয়সের মানুষ অ্যাজমায় আক্রান্ত হতে পারে। রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মাঝে অ্যাজমা থাকলে ছেলে-মেয়েদের আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে।এটি আসলে শ্বাসনালীর প্রদাহজনিত রোগ। যদি কোনো কারণে শ্বাসনালীগুলো অতিরিক্ত সংবেদন হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন কারণে উদ্দীপ্ত হয় তখন শ্বাসনালীতে বাতাস চলাচলের পথে বাধার সৃষ্টি হয়, এতে করে শ্বাস নিতে বা ছাড়তে কষ্ট হয় যাকে আামরা অ্যাজমা বা হাঁপানি নামে জানি ।
তবে এটি কোনো ছোঁয়াচে বা সংক্রামক ব্যাধি নয়। শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খেয়ে অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
প্রধান উপসর্গগুলো/লক্ষণগুলি/রোগ নির্ণয়ঃ
হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার সময় শ্বাসনালিতে নিম্নোক্ত পরিবর্তনগুলো দেখা যায় শ্বাসনালি লাল ও ফুলে যাওয়ার ফলে সরু হয়। শ্বাসনালির চারপাশের মাংসপেশিসমূহ সংকুচিত হয়ে শ্বাসনালিকে আরও সরু করে দেয়। শ্বাসনালিতে অধিক পরিমাণ শ্লেষ্মা তৈরি হয়ে শ্বাসনালিতে বায়ুপ্রবাহ আংশিকভাবে বন্ধ করে দেয় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।এ রোগের প্রধান উপসর্গগুলো হলো-
- শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট হয় ।
- বুকে চাপ অনুভব,বুকে ব্যথা হয় ।
- ঘন ঘন কাশি হওয়া ।
- বুকের ভেতর শব্দ হওয়া ।
- দম বন্ধ হয়ে আসা ।
- রাতে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কারণে ঘুমের অসুবিধা হওয়া ।
- শ্বাস-প্রশ্বােস ঘড়ঘড় করে শব্দ করে ।
- মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যাবে ।
- মাঝে মধ্যে দেখবেন কথা বলতেও অসুবিধা হচ্ছে। কেমন একটা হাপিয়ে যাওয়া ভাব আাসতে পারে ।
- কাশি শুরু হলে না থামা ।
- উদ্বিগ্ন এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হওয়া ।
- ঠোঁট নীল হয়ে যাওয়া ,চোখ লাল হয়ে যায় ।
- আবেগ, উত্তেজনা, ভয়, রাগ বেড়ে যাবে ।
- নাক চুলকায়, হাঁচি হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে ।
# একজন রুগীর অল্প যেকোনো একটি দুিট বা এরও বেশি উপসর্গ থাকতে পারে।
হাঁপানির কারণ ঃ
প্রদাহের কারণে শ্বাসনালি লাল হয়, ফুলে যায়, সরু হয় এবং ইরিটেন্ট বা উদ্দীপকের গতি অতি সংবেদনশীল হয় যার ফলে হাঁপানির উপসর্গ দেখা যায়।অ্যাজমা বা হাঁপানি থেকে বেঁচে থাকার প্রথম উপায় হলো যে কারণগুলোয় এলার্জি হয় তা যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা। এ ছাড়া বিভিন্ন জীবজন্তুর লোম থেকে এলার্জিজনিত কারণে অ্যাজমা বা হাঁপানি হয়ে থাকে। হাপানির কারন গুলো –
- অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমা : অ্যালার্জি হচ্ছে হাঁপানির একটি প্রধান কারণ। অ্যাজমার আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে ভাইরাস ।
- অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী এলার্জেনগুলো হচ্ছে পাম্প বা ঘাসের রেণু ,নানা ধরনের ধুলা,ময়লা দূষিত বাতাস ।
- কাঁচা রঙের গন্ধ, ঘরের চুনকাম ,কোনো কোনো ফলমূল ও খাদ্যদ্রব্য ,নানা ধরনের পালক, পোষা প্রাণীর লোম ।
- আবহাওয়ার পরিবর্তন। ব্যায়ামের ফলেও হাঁপানির সৃষ্টি হয়।
- রাতে বেশি খাওয়া, খাবার যেমন-কৃত্রিম রঙ কিছু কিছু খাবার ওষুধ বা রাসায়নিক পদার্থ হাঁপানির কারণ ।
- পেশাগত বিভিন্ন কারণে অ্যাজমা হয়ে থাকে। কলকারখানার নির্গত বিষাক্ত গ্যাস, গাড়ির ধোঁয়া, বিশেষ কিছু খাবার, ওষুধ ইত্যাদি অ্যালার্জি ও অ্যাজমার সৃষ্টি করে।
- বৃষ্টিতে ভেজা, কুয়াশায় হাঁটা, ঠান্ডা লাগানো ও নানা রকম মানসিক উত্তেজনার কারণেও হাঁপানি রোগ হতে পারে।
- ধূমপান নিষেধ। এমনকি পাশের ব্যক্তির ধূমপানও আপনার সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- রান্নার ধোঁয়াও শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দিতে পারে। মশার কয়েলও জ্বালাবেন না। ঘর ধোঁয়ামুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।
- ঠান্ডা খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলুন।
- বাড়িতে কুকুর, বিড়াল বা পোষা পাখি শোয়ার ঘর থেকে দূরে রাখুন। ঘরের আসবাব শুষ্ক রাখুন, ধুলা জমতে দেবেন না।
#এ ছাড়া মানসিক চাপে থাকলে হাঁপানির তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে। কোনো কোনো খাবার চিংড়ি মাছ, হাঁসের ডিম, গরুর মাংস, বেগুন, পুঁইশাক, মিষ্টিকুমড়া, ইলিশ মাছ প্রভৃতি খেলে চুলকায়, নাক দিয়ে পানি পড়ে কারও কারও- অ্যালার্জি হয় যা শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে । তবে খাবারের মাধ্যমে যে অ্যালার্জি হয় তাতে খুব কম লোকের অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এলার্জি টেস্ট করে নিশ্চিত হতে হবে তার জন্য এলার্জেন কি কি আছে।
হাঁপানিতে ইনহেলা ব্যাবহার –
হাঁপানি বা অ্যাজমার চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণে ইনহেলার সাময়িক ভাবে কাজ করে। বাস্তবতা হচ্ছে, ইনহেলার অত্যন্ত মৃদু/ অ্যাজমা এমনকি শিশুদের যখন চিকিৎসা দিতে হয়, তখনো ইনহেলারকেই চিকিৎসকেরা সহজ হিসেবে বেছে নেন। এলার্জি দ্রব্যাদি এড়িয়ে চলা এবং সঠিক ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি ভ্যাকসিনও অ্যাজমা রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিত্সা পদ্ধতি।
শীতে হাঁপানি রোগীদের করণীয় :
হাঁপানি রোগীদের জন্য শীতল আবহাওয়া, সর্দি-কাশি-বা ঠান্ডাজ্বর প্রচণ্ড কষ্টকর আর বিপদের কারণ হতে পারে। এই সময়ে ঠান্ডা, জ্বর এর প্রকোপ, ঠান্ডা-শুষ্ক বাতাস যা শ্বাসতন্ত্র সংকুচিত করে,তাই শীতে হাঁপানির রোগীদের প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা ও প্রস্তুতি
- পরিষ্কার স্কার্ফ বা টুপি ব্যবহার করুন।
- সর্দি হলে নাক মুছতে রুমাল নয়, পেপার টিস্যু ব্যবহার করুন। নাক, চোখমুখে ঘন ঘন হাত লাগাবেন না। সর্দি ঝাড়ার পর নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোবেন। সর্দি-কাশি আক্রান্তদের থেকে দূরে থাকা ভালো।
- বাইরে বের হওয়ার আগে আপনার নীল রঙের ইনহেলার দুই চাপ ব্যবহার করে নিতে পারেন।
- মুখ দিয়ে নেওয়া শ্বাস শুষ্ক এবং শ্বাসতন্ত্র আরও সংকুচিত করে তোলে। অন্যদিকে নাক দিয়ে নেওয়া শ্বাস উষ্ণ এবং আর্দ্র, ধোঁয়া-ধুলা ইত্যাদি ফিল্টার হয়ে আসে। তাই মুখে শ্বাস নেবেন না।
- হাঁপানি রোগীরা শীতের শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতি বছর ভ্যাকসিন নিতে পারেন।
- ঠান্ডা খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলুন।
তবে মনে রাখতে হবে, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি অ্যাজমার উপসর্গ মাত্র। সব ধরনের শ্বাসকষ্ট হাঁপানি নয়। বিভিন্ন কারণে একজন ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সে অনুযায়ী লক্ষণ দেখে সঠিক চিকিৎসাব্যবস্থা নিতে হবে।তবে নিয়মিত ওষুধ সেবনে ও নিয়মকানুন মেনে চললে রোগীর পক্ষে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা সম্ভব।
হোমিওপ্যাথীতে মাইগ্রেইনের ভাল চিকিৎসা আছে ।
সাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ে যে কোন প্রশ্ন থাকলে জানাতে পারেন !
ঔষধ এর জন্য যোগাযোগ করুন : 01951 53 53 53 ( বাংলাদেশ সময় সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা )
[ ভাল লাগলে পোস্ট টি শেয়ার করুন , শেয়ার বা কমেন্ট দিলে আমাদের কোনো লাভ অথবা আমরা কোনো টাকা পয়সা পাই না, কিন্তু উৎসাহ পাই, তাই অবশ্যই শেয়ার করুন । ]
YE! This Is A Good Blog!