চিরতা কি ? এবং এর উপকারিতা !
বাংলা নাম : চিরতা
ইংরেজি নাম : Clearing nut tree
বৈজ্ঞানিক নাম : Swertia chirayita (Roxb. ex Fleming) H. Karst.
পরিবার :Gentianaceae
ইউনানী নাম : চিরায়তা
আয়ুর্বেদিক নাম : কিরাত তিক্তা
আরবি নাম : যারিরাহ
ব্যবহার্য অংশ : সমগ্র গাছ
পরিচিতি
চিরতা ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বীরুৎ জাতীয় গাছ। গাছের কাণ্ড সরু, হলদে বাদামি রঙের এবং লোমহীন। গাছের নিচের পাতা উপবৃত্তাকার, বৃন্তহীন, ২ থেকে ৩ ইঞ্চি লম্বা ও সূক্ষ্ম শীর্ষ বিশিষ্ট। পুষ্পদণ্ড পাতায় ভর্তি এবং ফুল পীতবর্ণ বিশিষ্ট। ফল ডিম্বাকার ক্যাপসুল আকারের হয়ে থাকে। ফল পাকলে কালচে বর্ণ ধারণ করে এবং বীজ গোলাকার ও হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। চিরতা তিতা স্বাদযুক্ত।
এ গাছ হিমালয়ের উষ্ণমণ্ডলীর অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। কাশ্মীর ও ভুটানের পাহাড়ি এলাকায় এটি প্রচুর পরিমাণে জন্মে। কার্বন সমৃদ্ধ বালুময় মাটিতে এটি ভালো হয়। তবে চিরতার বীজের অঙ্কুরোদগম হার খুব কম। সাধারণত আগস্ট-সেপ্টেম্বর ফুল ধরে। সমতল ভূমিতে চিরতা মোটেও জন্মায় না। বাংলাদেশে কৃত্রিমভাবে কোথাও কোথাও চিরতার চাষ হয়।
নানাবিধ রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। এ পর্যন্ত ৪০ এর বেশি রাসায়নিক উপাদান চিরতা থেকে শনাক্ত করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে সব উপাদানের বেশির ভাগেরই জৈব রাসায়নিক কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
চিরতার প্রচলিত ব্যবহার
ইউনানী চিকিৎসা অনুযায়ী চিরতা হৃৎপিণ্ড ও যকৃতের সবলকারক, চোখের জ্যোতি বর্ধক ও জ্বর রোগে বিশেষ উপকারী।
ভারতীয় পশ্চিম প্রান্তের লোকেরা বলেন, হাঁপানিতে এর ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। ইউরোপ আমেরিকাতে এটি বলকারক ও শক্তিকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ডায়রিয়াতে ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মোতাবেক চিরতা স্নিগ্ধকারক, হজমকারক, চূরোগনাশক ও লিভার রোগ উপশমকারী। চিরতার লোকায়তিক প্রয়োগ।
ইনফুয়েঞ্জায় : ৫ থেকে ১০ গ্রাম চিরতা ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে সকালের দিকে অর্ধেকটা এবং বিকালের দিকে অর্ধেকটা খেতে দিতে হবে।
শোথে : শোথে এমনকি এলার্জির কারণে শরীর চুলকে ফুলে উঠলে চিরতা তাতে কাজ করে। রাতে ৪-৫ গ্রাম চিরতা ২৫০ মিলি গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিক ওটাকে ছেঁকে ২-৩ বারে ওই পানিটা খেলে উপশম হবে।
রক্তপিত্তে : এই সমস্যায় ৪ বা ৫ গ্রাম চিরতা দেড় বা দু’কাপ ঠাণ্ডা পানিতে ঘণ্টাখানিক ভিজিয়ে রেখে ৩-৪ বার খেতে হবে।
নবপ্রসূতার স্তন্য শোধনে : অনেক সময় দেখা যায়, নবপ্রসূতার শরীরে জ্বর জ্বর ভাব, জড়তা, এসিডিটি প্রভৃতি দেখা দেয়। এই মায়ের বুকের দুধ খেয়ে সন্তানের পেটফাঁপা, বমি, সাদা বা সবুজ ধরনের পায়খানা প্রভৃতি দেখা দেয়। এক্ষেত্রেও ৪ বা ৫ গ্রাম চিরতা ২ কাপ ঠাণ্ডা পানিতে ৩-৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে সেটা ছেঁকে খেলে মায়ের স্তন্য দোষের সংশোধন হবে।
গর্ভাবস্থায় বমিতে : গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে বমির উদ্রেক হয়। এ ক্ষেত্রে চিরতা চূর্ণ ১ গ্রাম করে চিনির পানি দিয়ে খেলে ওই বমি হওয়াটা বন্ধ হয়ে যায়।
প্রচণ্ড বমিতে : পিত্তজ্বরে বা ঘন ঘন বমি হচ্ছে যেটা তিতা ও কিছুটা জ্বর আছে এবং পেটে কিছুই থাকছে না সে ক্ষেত্রে ২ কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা একটু থেঁতো করে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ২-৩ ঘণ্টা বাদে ওটা ছেঁকে অল্প করে খেতে হবে তাহলে এ সমস্যা দূর হবে।
প্রবল হাঁপানিতে : একজিমার সাথে যাদের হাঁপানি অথবা অর্শ্বে রক্ত পড়া বন্ধ হওয়ায় হাঁপানি প্রবলাকার ধারণ করেছে, এমনটি হলে আধা গ্রাম চিরতা চূর্ণ ৩ ঘণ্টা অন্তর ২-৩ বার মধুসহ চেটে খেতে হবে। ফলে হাঁপানির প্রকোপটা কমে যাবে।
ক্রিমির উপদ্রবে : পেটের ওপরের অংশে মোচড়া দিয়ে ব্যথা যা সাধারণত ২ থেকে ৮ বছরের বালক বালিকাদেরই বেশি হয়; এক্ষেত্রে ২৫০ থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত চিরতা অল্প মধু অথবা একটু চিনি মিশিয়ে খেতে দিতে হবে। এর ফলে ক্রিমির উপদ্রবজনিত পেটে ব্যথা সেরে যাবে।
ডায়াবেটিসে : ডায়াবেটিস নানা ধরনের হতে পারে। তবে যে ধরনেরই হোক না কেন ৫০০ মিলিগ্রাম চিরতা চূর্ণ ও ২ গ্রাম ছোট গো চূর্ণ© (Tribulas terrestris) একসাথে মিশিয়ে সকালে ও বিকালে পানিসহ দু’বার খেতে হবে। তাহলে এই রোগ প্রশমিত হবে।
বাহ্য প্রয়োগ যে কোনো চুলকানিতে : ২০ গ্রাম চিরতাকে অল্প পানি দিয়ে ছেঁকে লোহার কড়াইতে সরষের তেল গরম করে তাতে ভাজতে হবে যেন পুড়ে না যায়। এরপর ওটাকে নামিয়ে ছেঁকে অল্প অল্প করে নিয়ে চুলকানিতে ঘষে লাগালে ২-৩ দিনের মধ্যে উপশম হবে।
পচা ঘায়ে : যেসব পচা ঘা সহজে সারছে না সেসব ঘায়ের ৰেত্রে ১০ গ্রাম চিরতা রাতে ১ কাপ বা গৱাস গরম পানিতে ভিজিয়ে পরের দিন সে ঘা ধুলে ২-৩ দিনে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
চুল পড়াতে : হয়তো কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না চুল পড়ে যাচ্ছে সে ক্ষেত্রে ২-৩ গ্রাম চিরতা ১ কাপ গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেই পানিটা ছেঁকে মাথা ধুলে চুল ওঠা কমে যাবে। তবে ১ দিন পরপর ৩-৪ দিন ধুতে হবে। এছাড়াও ২৫ গ্রাম চিরতা ফুল ২০০ গ্রাম নারকেল তেলে ভেজে ওই তেল মাথায় ব্যবহারে খুসকিসহ মাথায় ফুসকুড়ি ওঠা বন্ধ হয়।
চিরতাতে বিদ্যমান রাসায়নিক উপাদানগুলো
চিরতাতে বিদ্যমান সবচেয়ে তিক্ত উপাদানটি হলো এ্যামারোজেন্টি নামে গ্লুকোসাইড। এছাড়াও অফেলিক এসিড, চিরাটিন নামের আরেকটি গ্লুকোসাইড উপাদান দুটিও তিতা স্বাদযুক্ত। এছাড়া চিরতাতে নানা প্রকার এ্যালকালয়েড ও ট্রাইতারপিনয়েড বিদ্যমান। বিভিন্ন জ্যান্থোনস, স্টেরল, লিগন্যান প্রভৃতিও চিরতায় বিদ্যমান গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
চিরতার কার্যকারিতা
বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা স্বীকৃত যে জৈবিক কার্যকারিতায় চিরতা উপকারী ভূমিকা রাখে সেগুলো হলো-
ক্রিমিনাশকতায়, লেশম্যানিয়াসিস প্রতিরোধে, শোথ নিরাময়ে, প্রদাহনাশকতায়, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে, জ্বর নিরাময়ে, যক্ষ্মা প্রতিরোধে, স্নায়ুর কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণে, কোমলতা আনায়নে, যকৃত প্রতিরক্ষায়, উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, রেচনে, পেটের ব্যথায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, টনিক হিসেবে, হৃৎকার্য নিয়ন্ত্রণে, রক্ত পরিষ্কারে, হাইপোগ্লাইসেমিক কার্যকারিতার জন্য চিরতার কার্যকর উপাদানটি হলো সোয়ের চিরিন। এসব ছাড়াও গ্রাম পজিটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ উভয় প্রকার ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে চিরতা জীবাণুনাশক কার্যকারিতা প্রদর্শন করে। হারবাল এন্টিসেপ্টিক ও এন্টিফাংগাল ওয়েন্টমেন্ট প্রস্তুতিতেও চিরতা ব্যবহৃত হয়। আধুনিককালে চিরতা গনোরিয়া, সিফিলিস, শ্বেত প্রদর, ডায়াবেটিস ও আলসারে বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে।
চিরতা সম্পর্কিত মহানবীর উক্তি : একদা রাসূলে পাক (সা.) এর মহিয়সী বিবিগণের মধ্যে কোনো এক জনের আঙুলে ফোঁড়া বের হয়। তাঁর বর্ণনা মতে, ‘রাসূলে পাক (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার কাছে কি যারিরাহ (চিরতা) আছে? আমি বললাম জী, হ্যাঁ। রাসূলে পাক (সা.) এরশাদ করলেন, ‘ফোঁড়ার ওপর যারিরাহ লাগিয়ে দাও এবং এই দোয়া পাঠ কর।
চিরতা সম্পর্কিত নবীজীর উপরোক্ত মন্তব্য-এর গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে আরও সমুন্নত করেছে। আর এর মধ্যে এই মূল্যবান ভেষজটিকে নিয়ে গবেষণার সূক্ষ্ম নির্দেশনাও নিহিত রয়েছে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট থেকে নেয়া
[ ভাল লাগলে পোস্ট টি অবশ্যই কমেন্ট বা শেয়ার করুন , শেয়ার বা কমেন্ট দিলে আমাদের কোনো লাভ অথবা আমরা কোনো টাকা পয়সা পাই না, কিন্তু উৎসাহ পাই, তাই অবশ্যই শেয়ার করুন । ]
ভাই দোয়াটার নাম কী???