বহুমূত্র রোগ বা ডায়াবেটিস রোগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
বহুমূত্র রোগ বা ডায়াবেটিস মেলিটাস(ইংরেজি: Diabetes mellitus) একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ‘ডায়াবেটিস’ বা ‘বহুমূত্র রোগ’। তখন রক্তে চিনি বা শকর্রার উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। ইনসুলিনের ঘাটতিই হল এ রোগের মূল কথা। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন, যার সহায়তায় দেহের কোষগুলো রক্ত থেকে গ্লুকোজকে নিতে সমর্থ হয় এবং একে শক্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে। ইনসুলিন উৎপাদন বা ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতা-এর যেকোনো একটি বা দুটোই যদি না হয়, তাহলে রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ। আর একে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ঘটে নানা রকম জটিলতা, দেহের টিস্যু ও যন্ত্র বিকল হতে থাকে।
রোগ নির্ণয়
মানুষের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ সাধারণত ৩.৩ থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর <৭.৮ মিলি.মোল/লি। কিন্তু যদি গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৭ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর >১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায়, তবে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
ধরন
বহুমূত্র রোগ বা ডায়াবেটিস বললে সাধারাণতঃ ডায়াবেটিস মেলিটাস বোঝায়। তবে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস নামে আরেকটি রোগ আছে যাতে মূত্র উৎপাদন বেশি হয় কিন্তু তা ADH অ্যান্টি ডাইইউরেটিক হরমোন নামে অন্য একটি হর্মোনের উৎপাদনের অভাব বা ক্রিয়ার অভাবে হয়ে থাকে এবং মূত্রাধিক্য এবং তার জন্য অতিতৃষ্ণা এই দুটি উপসর্গের মিল ছাড়া এই রোগটির সঙ্গে “ডায়াবেটিস মেলাইটাস”-এর কোন সম্পর্ক নেই। এ দুটির মধ্যে ডায়াবেটিস মেলাইটাসের প্রকোপ অনেক বেশী। ডায়াবেটিস মেলাইটাস আবার দু’রকম হতে পারে। যথাঃ টাইপ-১ বা ইনস্যুলিন নির্ভরশীল এবং টাইপ-২ বা ইনস্যুলিন নিরপেক্ষ ডায়াবেটিস।
টাইপ-১
টাইপ-১ বহুমূত্র হল অটোইমিউন রোগ। এ রোগে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। তাই যাদের টাইপ-১ হয়, এদের দেহে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় খুবই কম। এ জন্য রোগীকে বেঁচে থাকার জন্য ইনসুলিন ইনজেকশন বা ইনসুলিন পাম্প নিতে হয়। শিশু ও তরুণদের মধ্যে এ ধরনের বহুমূত্র হয় বেশি। ১০-৩০ বছরের মধ্যে দেখা দেয়। ইহা মূলত জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। এর জন্য দায়ী হল HLADR 3 এবং HLADR 4 নামক দুটি জিন ।
টাইপ-১ কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়
- টাইপ-১-এ অটোইমিউনিটির জন্য বিটা কোষের ধংসের কারণে এই টাইপ-১-এ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে ।
- টাইপ-১-বি এটিও বিটা কোষের ধংসের কারণে হয়ে থাকে, কিন্তু এর সঠিক কারণ জানা যায়নি ।
(১) রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় (>130 mg/100ml)। (২) রক্তে ছিটোনো বডির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় । (৩) মুত্রের মাধ্যমে গ্লুকোজের নির্গমন বা গ্লুকোসুরিযা হয়।
টাইপ-২
টাইপ-২ বহুমূত্র রোগের পেছনে থাকে মূলত ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’। টাইপ-২ রোগীরা শরীরে যে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়, তাকে ব্যবহার করতে পারে না। ব্যায়াম ও খাদ্যবিধির সাহায্যে একে প্রথমে মোকাবিলা করা হয়। তবে অনেক সময় প্রয়োজন হয় মুখে খাওয়ার ওষুধ, এমনকি ইনসুলিন ইনজেকশন। ৪০ বছর বা তারপরে এ ধরনের বহুমূত্র রোগ দেখা দেয়। মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় পানীয় টাইপ-২ এর ঝুঁকি বাড়ায়। খাবারে চর্বির ধরণও গুরুত্বপূর্ণ;স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স-ফ্যাটি এসিড ঝুঁকি বাড়ায় পক্ষান্তরে পলি-আনস্যাচুরেটেড ও মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ঝুঁকি কমায়। অত্যধিক পরিমাণ সাদা ভাত খাওয়াও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। শারীরিক পরিশ্রম না করাও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের অন্যতম একটা কারণবিশ্বজুড়ে ২৪৬ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগীর ৯০ শতাংশের বেশি হল টাইপ-২ ডায়াবেটিস। দুই ধরনের ডায়াবেটিসই গুরুতর এবং হতে পারে শিশু ও তরুণদেরও। এ জন্য ডায়াবেটিসের বিপদ-চিহ্নগুলো জানা খুবই প্রয়োজন। ‘মৃদু ডায়াবেটিস’ বলে কিন্তু কিছু নেই।
অন্যান্য ধরণ
নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় তৃতীয় এক প্রকার ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। এটা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস নামেও পরিচিত।
সাধারণ লক্ষণাদি
- ঘন ঘন প্রস্রাব। এ কারণে এ রোগটির নাম বহুমূত্র রোগ ;
- অধিক তৃষ্ণা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া ;
- অতিশয় দুর্বলতা ;
- সার্বক্ষণিক ক্ষুধা ;
- স্বল্প সময়ে দেহের ওজন হ্রাস ;
- চোখে ঝাপসা দেখা ;
- ঘন ঘন সংক্রমণ।
বৈশিষ্ট্য ও বিভিন্ন জটিলতা
- অতিরিক্ত মেদ এ রোগের অন্যতম কারণ ;
- উপসর্গহীনতা বা অসচেতনতার কারণে চিকিৎসার অভাব ;
- কিডনি বা বৃক্কের অক্ষমতার অন্যতম মূল কারণ ডায়াবেটিস ;
- অন্ধত্ব বা দৃষ্টিবিচ্যূতির অন্যতম মূল কারণ ডায়াবেটিস ;
- বিনা দুর্ঘটনায় অঙ্গচ্ছেদের অন্যতম মূল কারণ ডায়াবেটিস।
বিষয় | টাইপ-১ | টাইপ-২ |
---|---|---|
আক্রান্ত হবার সময়কাল | দ্রুত | ধীর |
আক্রান্ত হবার বয়স | বেশীরভাগ ক্ষেত্রে শিশুঅবস্থায় | বেশীরভাগ ক্ষেত্রেপরিণত বয়সে |
দেহের আকৃতি | স্বাভাবিক বা, ক্ষীণকায় | স্থূলকায় |
কিটোএসিডোসিস | সহজপ্রাপ্য | বিরল |
অটোঅ্যান্টিবডি | সাধারণত উপস্থিত | অনুপস্থিত |
এন্ডোজেনাস ইনসুলিন | কম অথবা, অনুপস্থিত | স্বাভাবিক, কমে যাওয়া,বা বৃদ্ধি পাওয়া |
যমজদের মধ্যেসাধারণভাবে
আক্রান্ত হওয়ার হার |
৫০% | ৯০% |
Prevalence | ~১০% | ~৯০% |
চিকিৎসা
এই রোগের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরণের হোমিওপ্যাথি ঔষধ ব্যবহৃত হয় যেমন Syzygium jambolanum , Medorrhinum , cannabis sativa , cannabis indica , Acidum Phosphoricum ইত্যাদি।
সাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ে যে কোন প্রশ্ন থাকলে জানাতে পারেন !
[বিঃদ্রঃ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ব্যতীত ওষধ সেবন করা উচিত নয়।]
[ ভাল লাগলে পোস্ট টি শেয়ার করুন , শেয়ার বা কমেন্ট দিলে আমাদের কোনো লাভ অথবা আমরা কোনো টাকা পয়সা পাই না, কিন্তু উৎসাহ পাই, তাই অবশ্যই শেয়ার করুন । ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন