ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রম – IBS আইবিএস
আইবিএস (IBS) কী?
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রম সংক্ষেপে আইবিএস (IBS) হচ্ছে অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতার ত্রুটিজনিত সমস্যা। বিভিন্ন গবেষণায় এর কারণ হিসেবে নানা থিওরি বা ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেই একে বলা হয় ফাংশনাল গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইনাল ডিজঅর্ডার (Functional Gastrointestinal Disorder) । অন্য নামে একে বলা হয় স্পাসটিক কোলন (Spastic Colon). সর্বশেষ ‘Rome III Diagnostic Criteria’ অনুসারে আইবিএসকে বর্ণনা করা হয় এভাবে-
বারবার পেট ব্যাথা বা অস্বস্তি যদি মাসে কমপক্ষে তিন দিন সর্বশেষ তিন মাসে দেখা যায় এবং সেই সাথে আরো দুই বা ততোধিক লক্ষণ থাকে, যেমন- মলত্যাগের পর অবস্থার উন্নতি হওয়া, মলত্যাগের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া বা মলের ঘনত্ব ও অবস্থার পরিবর্তন হওয়া- তাহলে প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া যায় যে আপনি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রমে ভুগছেন।
কোথায় ও কাদের বেশি হয়?
সারা বিশ্বে প্রায় ১১ ভাগ লোক এই সমস্যায় ভোগেন। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ আমেরিকায়, যেখানে প্রায় ২১ ভাগ মানুষের মধ্যেই এই রোগ দেখা যায়। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় এর সংখ্যা কিছুটা কম যা প্রায় ৭ ভাগ।
গবেষণায় দেখা গেছে ২০-৪০ বছর বয়সী মানুষের বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এ সমস্যাটি বেশি দেখা যায়।
রোগের লক্ষণ
>) পেট ব্যাথা বা অস্বস্তি যা মলত্যাগের ফলে কমে যায়
>) মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন, এ ছাড়া পাতলা পায়খানা অথবা পায়খানা শক্ত হয়ে যাওয়া। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুটি একসাথেও থাকতে পারে।
অন্যান্য লক্ষণ
1)তলপেটে ব্যথা হয়। ব্যথা মোচড় দিয়ে শুরু হয় এবং পায়খানা করার পর ব্যথা কমে যায়।
2) পেটের মধ্যে সারা দিন বুদবুদ আওয়াজ হতে থাকে। মনে হয় পেটের মধ্যে গ্যাস ভরে আছে।
3) কখনো পাতলা পায়খানা, কখনো কষা পায়খানা (কনস্টিপেশন) হয়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে সব সময় পাতলা পায়খানা বা কষা পায়খানা হয়।
4) যাদের সব সময় পাতলা পায়খানা হয় তাদের ক্ষেত্রে প্রথমে পেটে ব্যথা হয় এবং পরে পাতলা পায়খানা হওয়ার পর তা কমে আসে। ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হয় এবং প্রতিবার খুব অল্প পরিমাণে পায়খানা হয়।
5) ঘুমের মধ্যে সাধারণত কখনোই পায়খানার বেগ হয় না।
6) পায়খানার সময় প্রচুর পরিমাণে আম বা মিউকাস যায়। আম যায় বলে অনেকে অজ্ঞতাবশত একে আমাশয় বলে।
7 যাদের কষা পায়খানার প্রবণতা বেশি তারা পেটে ব্যথা নিয়ে টয়লেটে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেও অতৃপ্তি নিয়ে টয়লেট থেকে বের হতে হয়।
8 পায়খানা সমস্যা থাকলেও এসব রোগীর ওজন তেমন হ্রাস পায় না।
9) পায়খানার সমস্যার পাশাপাশি এসব রোগীর ক্ষুধামন্দা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, মাথা ব্যথা, পিট ব্যথা, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া।
রোগের কারণ
যদিও মূল কারণ জানা যায়নি তবুও এর কারণ হিসেবে নানাবিধ থিওরি বা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। যেমন-
>) মস্তিষ্ক-অন্ত্র চক্র বা অক্ষে জটিলতা: মস্তিষ্ক অন্ত্রের স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে, আবার অন্ত্র মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে। এভাবে মস্তিষ্ক ও অন্ত্রের মধ্যে যে চক্র বা অক্ষ গড়ে ওঠে, সেই চক্রে বা অক্ষে ত্রুটির জন্য এটি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
>) হাইপোথেলামাস-পিটিউটারি অক্ষে জটিলতা: Stress বা চাপ আইবিএস এর সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। এর কারণ হিসেবে দেখা যায় Stress বা চাপ হাইপোথেলামাস-পিটিউটারি অংশের এবং সিমপেথেটিক নার্ভাস সিস্টেমের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়।
>) অন্ত্রের সক্রিয়তার পরিবর্তন: অন্ত্রের সক্রিয়তার পরিবর্তনও এ রোগের অন্যতম একটি কারণ। যেমন- অন্ত্রের অধিক সংযোজনশীলতা, অন্ত্রের প্রদাহ, শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থার অতিরিক্ত কার্যকারিতা, ক্ষুদ্রান্তে ব্যাকটেরিয়ার অতিরিক্ত বৃদ্ধি, আইলিয়াম (Ilium) এ সেরটনিন (Serotonin) পরিবহনকারীর (transporter) অতিরিক্ত বৃদ্ধি, অতিরিক্ত সাইটোকাইন (Cytokine)।
>) বংশগত: যেমন-২৮৬ জিন ডায়রিয়া প্রধান আইবিএসএ দেখা যায়।
বর্তমান ধারণা
>) অন্ত্রের স্বাভাবিক ভাবে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়ার (Bactorial florae) মধ্যে সমস্যা, যেমন- Backterioidetes ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা হ্রাস
>) মস্তিষ্কের গ্রে মেটারের মধ্যে পরিবর্তন বিশেষ করে নারীদের।
কখন শুরু হয়?
সুনির্দিষ্ট কারণ না থাকলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়-
>) জীবাণু সংক্রমণের পর: ১০ ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় অন্ত্রের জীবাণু সংক্রমণের পর আইবিএস শুরু হতে পারে। কোনো কোনো প্রোটোজোয়া যেমন- Blastocystis hominis, Dientamoeba Fragilis এর সংক্রমণের পর আইবিএস শুরু হতে পারে।
>) দীর্ঘদিন জ্বরে ভোগার পর
>) দুঃশ্চিন্তা বা বিষন্নতায় ভোগার ফলে
>) এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে এ রোগ দেখা দিতে পারে।
শ্রেণিবিন্যাস
>) আইবিএস-ডি (IBS-D) যেখানে ডায়ারিয়া বা পাতলা পায়খানা প্রধান সমস্যা
>) আইবিএস-সি (IBS-C) যেখানে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রধান
>) আইবিএস-এম (IBS-M) কখনো পায়খানা পাতলা হয় আবার কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে
>) আইবিএস-ইউ (IBS-U) এটাকে কোনো বিশেষ শ্রেণিতে ফেলা যায় না
>) আইবিএস-পিআই (IBS-PI) এটা ইনফেকশনের পর শুরু হয়।
পরীক্ষা-নীরিক্ষা
রোগ নির্ণয়ে কোনো বিশেষ পরীক্ষা-নীরিক্ষা নেই। মূলত রোগের লক্ষণ দেখেই রোগ নির্ণয় করা হয়। তবে এই লক্ষণগুলো অন্য কোনো রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দিয়েছে কিনা যেমন-জিয়ারডিয়াসিস (Giardiasis), সিলিয়াক ডিজিস (Coeliac Disease), পিত্তথলীল পাথর (Gall Stone), বিলিয়ারি ডিজিস (Billiary Disease) তা দেখার জন্য কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষার প্রয়োজন হয়। যেমন-
>) মল পরীক্ষা (Stool R/M/E)
>) রক্ত পরীক্ষা (CBC)
>) লিভার বা যকৃত পরীক্ষা (LFT)
>) আলট্রাসনোগ্রাম (USG)
>) অ্যান্ডোসকপি (Endoscopy)
>) হাইড্রোজেন ব্রেদ টেস্ট ইত্যাদি।
চিকিৎসা
এটা দীর্ঘমেয়াদী একটি সমস্যা। কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে রোগের লক্ষণ অনুসারে কিছু কিছু ওষুধ, সাইকোথেরাপি ও খাদ্যাভাসের পরিবর্তন এর চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে চলে আসছে।
খাদ্যাভাসের পরিবর্তন
খাদ্যাভাসের পরিবর্তন করেও এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। সে দিক থেকে যেসব খাবারে এই সমস্যা বাড়ে এসব খাবার পরিহার করতে হবে। যেমন- দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার, কিছু কিছু শাক, ভাজা-পোড়া ও তৈলাক্ত খাবার, কৃত্রিমভাবে তৈরি চিনি, ক্যাফেইন জাতীয় খাবার, মদ জাতীয় পানীয়। এ ছাড়া খাদ্যের একটি ডায়েরি বা নিয়ম মেনে চললে উপকার পাওয়া যেতে পারে। যেমন- অল্প অল্প করে বার বার খাওয়া, FODMAP (গ্লুটিনমুক্ত, আইবিএসের জন্য উপযুক্ত) খাবার খাওয়া।
ভাই আমি প্রায় ৫ বছর ধরে আই বি এস রোগে ভোগছি। শত চিকিৎসা করেও এর থেকে পাচ্ছিনা। এই রোগের জন্য এখন আমি প্রায় শেষ। কি যে করি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
সমস্যা থাকলে সমাধান আছে ।
আমি আপনার সমস্যার কথা পড়েছি ।
আরও কিছু তথ্য লাগবে ।
ফোন করুন : +8801951 53 53 53
( বাংলাদেশ সময় সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা )
ডাঃ মোঃ শামীম তালুকদার
আপনাদের দেয়া লক্মষনের সাথে সম্পূর্ন মিলেছে। দয়া করে ঔষধের কথা বলবেন কি? নাম রাসেল,বয়স-30,
ফ্রী প্রেসক্রিপশনের জন্য, আপনার সমস্যার কথা লিখে পাঠান !