যা হলে মেয়েদের যৌবন শেষ হয় না
মেয়েদের গড়ে ১২ বছর বয়সের পর থেকেই স্বাভাবিক ঋতুচক্র শুরু হয়৷আবার একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর এটি বন্ধও হয়ে যায়৷ মহিলাদের ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরবর্তী সময়কে মেনোপজ বলা হয়৷
মেনোপজের সময় বা সময় চলাকালীন মহিলাদের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়৷এটি হলেও মেয়েদের যৌবন শেষ হয় না। এর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভারতের একটি গণমাধ্যমে জানিয়েছেন বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দীপান্বিতা হাজারী।
মেনোপজ কী?
একটা বয়সের পরে মেয়েদের ঋতুচক্র বরাবরের মতো বন্ধ হয়ে যায়৷ঋতুচক্রের বন্ধ হয়ে যাওয়াকেই মেনোপজ বলা হয়৷
মহিলাদের স্বাভাবিক ঋতুচক্র যে বয়সে বন্ধ হয়
আমাদের দেশের আবহাওয়া ও পরিমণ্ডল অনুযায়ী মহিলাদের ঋতুচক্র সাধারণত ৪৮ বছর থেকে ৫৪ বছরের মধ্যে বন্ধ হতে পারে৷ সেই হিসেবের গড় করলে ৫১ বছর বয়সকে মেনোপজের বয়স বলা যেতে পারে৷
মেনোপজ হওয়ার আগে উপসর্গ
মেনোপজের প্রধান উপসর্গ হলো অনিয়মিত পিরিয়ড৷ অর্থাৎ প্রথমেই যে একেবারেই পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়৷ দেখা যেতে পারে প্রথমে একমাসে দুইবার পিরিয়ড হলো৷ এরপর তিন মাস পিরিয়ড বন্ধ থাকল৷ আবার ফের চার মাস নিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার পর আবার বন্ধ হলো৷এছাড়া অন্যান্য উপসর্গগুলো হলো কান-মাথা ঝাঁ ঝাঁ করা বা হট ফ্ল্যাশ, জয়েন্ট পেইন ইত্যাদি মেনোপজের সাধারণ উপসর্গ৷
নির্দিষ্ট বয়সের অনেক আগেই পিরিয়ড বন্ধ
নির্দিষ্ট বয়সের অনেক আগে মেনোপজ হতেই পারে৷একে আর্লি মেনোপজ বলা হয়৷ কিন্তু এটা একেবারেই কম৷ এটা খুব বিরল, যা হয়ত পরিসংখ্যানেও আসে না৷
যাদের আর্লি মেনোপজ হয়
যেহেতু সময়ের অনেক আগেই মেনোপজ হয়ে যায়, ফলে শারীরিক সমস্যা দেখা তো দিতেই পারে৷মেয়েদের শরীরে মূলত দু’টি হরমোন থাকে ইস্ট্রোজেন আর প্রোজেস্টেরন৷মেনোপজ হওয়া মানে ইস্ট্রোজেন ক্ষরণ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়া৷এর ফলে পরবর্তী ক্ষেত্রে সন্তানধারণ তো আর সম্ভব হবেই না, তার সঙ্গে খিটখিটে স্বভাব, জয়েন্ট পেইন, মুড ফ্ল্যাশ হতে পারে৷ যাদের অল্প বয়সেই মেনোপজ হয়, তাদের মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকে না বলেই পারিবারিক জীবনে বা স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কে এর ছাপ পড়তে পারে৷
আর্লি মেনোপজের কারণ
সেইভাবে নির্দিষ্ট করে আর্লি মেনোপজের কোন কারণ নেই৷বলা যেতে পারে সবই প্রকৃতির খেয়াল৷আর একটা কারণ রয়েছে৷ যদিও সেটাও নির্দিষ্ট নয় সেটা হলো হেরিডিটি বা বংশগত৷কোন মহিলার মা, মাসি বা পারিবারের অন্য কারোর আর্লি মেনোপজ হলে জিনগতভাবে এটি হতে পারে৷
মেনোপজের ফলে স্বাভাবিক জীবনে পরিবর্তন
মেয়েদের জীবনে চারটি পর্যায় রয়েছে৷ঋতুচক্রের শুরু, সন্তানের জন্ম, ব্রেস্ট ফিডিং ও মেনোপজ৷ এগুলো সবই হরমোনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত৷ মেনোপজ হওয়া মানেই হরমোনের ক্ষরণ বন্ধ হয়ে যাওয়া৷ফলে শরীরে কিছু পরিবর্তন আসতেই পারে৷ মেজাজ ঠিক না থাকা জয়েন্ট পেইন ইত্যাদি৷তবে এটা যেহেতু পুরো বিষয়টাই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। তাই ধীরে ধীরে পাঁচ-দশ বছর পর শরীর আপনা থেকে এটি মেনে নেয়৷ফলে তেমন কোনও সমস্যা দেখা যায় না৷ অনেকেই মনে করেন, মেনোপজ হওয়া মানেই হয়তো তার যৌবন শেষ হয়ে গেল তা কিন্তু একেবারেই নয়৷ এসময় নির্দ্বিধায় তারা যৌনতা উপভোগ করতে পারেন৷ কন্ট্রাসেপশনের ভয়ও থাকে না৷স্বামীর সঙ্গে খোলামেলা সম্পর্কে কোন সমস্যা হয় না৷ কিন্তু এগুলো ছাড়া যদি অন্য কোন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে৷ বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি ও মেডিসিন রয়েছে৷ ফলে তেমন কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়৷
মেনোপজের সঙ্গে মানসিক স্থিতি
মেনোপজের ফলে ত্বক খারাপ হয়ে যেতে পারে৷ অনেকে খুব মোটা হয়ে যান বা রোগা হয়ে যান৷সেই কারণে অনেকে মানসিক অবসাদে ভুগতে পারেন৷অনেকে মনে করেন, পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া মানেই হয়ত যৌবন চলে যাওয়া৷সেই কারণে মহিলাদের অবসাদ দেখা যায়৷তবে এটা পুরোটাই কল্পিত৷এছাড়া হরমোনের ক্ষরণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে মেজাজ খারাপ থাকা, হঠাৎ রাগ হওয়া ইত্যাদি হতেই পারে৷ অনেক সময় দেখা যায়, মহিলা যে কথাগুরো বলতে চান না সেগুলোও বলে ফেলছেন৷ এটাও মানসিক ভারসাম্য হারানোর একটি লক্ষণ৷
এসময় মন ভারো রাখতে
মেনোপজের সময় মন ভালো রাখার জন্য মেয়েদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে৷নিজের সঠিক খেয়াল নিতে হবে৷সবচেয়ে যেটা জরুরি সেটা হলো মেয়েদের নিজের কর্মজগৎ৷বিভিন্ন কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখলে মানসিক অবসাদের সম্ভাবনা থাকবে না৷
মেনোপজ চলাকালীন ডায়েট
মেয়েরা সারাজীবনই স্বামী বা পরিবারের বাইরে নিজের খেয়াল রাখার কথা ভুলে যান৷ অনেক সময় ঠিক মতো খাওয়া দাওয়াও করেন না৷ কিন্তু মেনোপজের সময় কিন্তু বিশেষ যত্ন দরকার৷ কারণ মেয়েদের মধ্যে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা যায়৷ তাই, এই সময় একেবারে ব্যালেন্স ডায়েট প্রয়োজন৷অর্থাৎ খুব বেশি খাবারও নয় আবার খুব কম খাবারও নয়৷ফল অবশ্যই খেতে হবে৷ এছাড়া দু’বেলা টক দইয়ের লাস্যি৷দুধ আর দুধ জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে৷তবে অবশ্যই সুগার বা অন্যান্য কোন রোগ রয়েছে কিনা তা দেখে নিতে হবে৷ একটা সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন৷মেনোপজ হচ্ছে মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো খাওয়া দাওয়া করলে এ নিয়ে তেমন কোন সমস্যাই থাকবে না ৷
[ ভাল লাগলে পোস্ট টি অবশ্যই শেয়ার করুন , শেয়ার বা কমেন্ট দিলে আমাদের কোনো লাভ অথবা আমরা কোনো টাকা পয়সা পাই না, কিন্তু উৎসাহ পাই, তাই অবশ্যই শেয়ার করুন । ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন