মাজুফল এক ভয়ানক প্রতারণা ! যোনিপথ টাইট করার ঔষধ
কী এই মাজুফল?
মাজুফল এর ইংরেজি নাম হচ্ছে ‘Gall nut’ বা ‘Oak Gall’। এটি মূলত একটি চাইনিজ ফল।
আসলে ঠিক ফলও না, বোলতা জাতীয় একধরনের পতঙ্গের কারণে এটি হয়ে থাকে। কিভাবে তা সম্ভব? আপনি হয়তো জানেন না, এই মাজুফল আসলে ওক গাছের বাকল ও বোলতার বর্জ্য পদার্থ দিয়ে তৈরি একটি বাসা যার ভেতর সেই বোলতার লার্ভা বেড়ে ওঠে। বোলতার প্রজননের সময় এরা ওক গাছের গায়ে ছিদ্র করে এবং ডিম পাড়ে।
এই ছিদ্রের ফলে গাছের গায়ে ট্যানিক এসিড (Tannic acid) এবং গ্যালিক এসিড (Gallic acid) নামক এক প্রকার রস বের হয় এবং বোলতার বর্জ্যের সাথে মিশে একটি ফল বা বলের আকৃতি তৈরি করে। এই বলের ভেতরেই সেই বোলতার লার্ভা বেড়ে ওঠে এবং যখন পূর্ণাঙ্গ রুপ নেয়, তখন তা ছিদ্র করে বের হয়ে আসে। এই পরিত্যক্ত বল বা বাসাটিই হচ্ছে মাজুফল!
শুনেই একটু হলেও কি গা গুলিয়ে উঠছে না? জানেন কি, বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ীরা এই মাজুফল দিয়ে সরল মানুষদের প্রতারিত করছে? কীভাবে? দেখুন তবে-
মাজুফল যেভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে
১) মাজুফল ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহার করা হয়। এটি থেকে কালি তৈরি করা হয়। টেক্সটাইল বা লেদার শিল্পেও এর ব্যবহার রয়েছে। চীন, ইন্দোনেশিয়ায় এটি প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফেসবুকে অনেকেই বলছেন এটি ব্রেস্ট টাইটনিং ও ভ্যাজাইনা টাইটনিং- এর কাজ করে। তবে বাস্তবে এর কোন সত্যতা পাওয়া যায় নি।
২) এটি ব্যবহার করার জন্য ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ভয়ঙ্কর পদ্ধতির উল্লেখ করছেন যা আসলে ভয়াবহ স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। যেমন কেউ বলছেন এই ফল গুঁড়ো করে বা পানিতে ভিজিয়ে বা সেদ্ধ করে, সেই পানিতে কটন বল ভিজিয়ে তা ভ্যাজাইনাতে বেশ কিছুক্ষণ রেখে দিতে! এভাবে পর পর সাত দিন ব্যবহার করলে ভ্যাজাইনা টাইট হয়ে যাবে!
৩) আবার কেউ বলছেন, এই ফল গুঁড়ো করে তার সাথে মধু মিশিয়ে ছোট বলের মত করে নিতে।
তারপর সেই বল সহবাসের ৪-৫ ঘণ্টা আগে ভ্যাজাইনাতে রেখে দিতে এবং তাতে ভাজাইনা টাইট হয়ে যাবে। কি ভয়ংকর কথা! সেই সাথে এও বলে দেয়া হয় যে এই পানি ভেজানো কটন বল বা গুঁড়োর পেস্ট ব্যবহারের ফলে ভ্যাজাইনাতে একটু জ্বলুনি হতে পারে। জেনে রাখুন, ভ্যাজাইনাতে মলম, তরল, পেস্ট বা যে কোন কিছু দেয়ার পর যদি জ্বলুনি শুরু হয় তবে তা ভ্যাজাইনার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
৪) এমন আরো অনেক জঘন্য উপায়ে ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে উচ্চ মূল্যে এই মাজুফল বা গাল নাট দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। অনেক নারীই আছেন যার একাধিক বাচ্চা প্রসবের পরে বা একাধিকবার এমআর (MR- Menstrual regulation)/ ডিএনসি (D&C- Dilation and curettage) করানোর পরে তাদের যোনী বা ভ্যাজাইনা ঢিলে হয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়েন। অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগের সদ্ব্যবহারটাই করে যাচ্ছেন। এর ফলে নারীরা শুধু যে ঠকছেন তা নয়, এতে করে নিজেদের অজান্তেই শরীরের অনেক বড় ক্ষতিও করে ফেলছেন।
তাই এখনি হয়ে যান সাবধান!
নারীর শরীরের সবথেকে সেনসিটিভ যায়গাগুলোর মধ্যে ভ্যাজাইনা অন্যতম। নিজের সুস্বাস্থের পাশাপাশি একটি সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য এর ভূমিকা অনেক। তাই এ ব্যাপারে নারীদের চিন্তা থাকাই স্বাভাবিক। ভ্যাজাইনা এতই বেশি সেনসিটিভ যে চিকিৎসকগণের ভেতরে সাবান বা অ্যান্টিসেপ্টিক পর্যন্ত ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। আর সেখানে এরকম একটি জঘন্য জিনিস এত বিচ্ছিরিভাবে ব্যবহার করার কোন মানে হয় কি? সৃষ্টিকর্তা নারীদেহের এই বিশেষ অঙ্গটির সুরক্ষার জন্য প্রাকৃতিকভাবেই ব্যবস্থা করে রেখেছেন। তারপরেও নারীদের ভ্যাজাইনাল ফাঙ্গাল ইনফেকশন, ভ্যাজাইনাল ক্যান্সার, ওভারিয়ান ক্যান্সারসহ আরো বিভিন্ন ভয়ানক রোগ হয় শুধুমাত্র নিজেদের অসাবধানতার কারণে। যার শেষ পরিনতি মৃত্যু।
এ বিষয়ে এত কিছু জানার আছে যে তা একবারে বলে শেষ করা সম্ভব না। তাই আমার পরবর্তি লেখায় ভ্যাজাইনাতে এ ধরনের উল্টাপাল্টা জিনিস ব্যবহারের ফলে কী কী ধরনের সমস্যা হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে আপনার কী করা উচিত আর কী অনুচিত তা নিয়ে আরো বিস্তারিত লিখবো।
আর তাই বলছি আপুরা, বিজ্ঞাপনদাতাদের লোভনীয় কথাবার্তায় যে কোন জিনিস অন্ধের মত ব্যবহার করতে ঝাপিয়ে পড়বেন না। যে কোন জিনিস ব্যবহারের আগে তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন, বুঝুন এবং তারপরেই অগ্রসর হন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন