জেনে নিন, ঘুমন্ত অবস্থাতেও যে ৭টি কাজ করতে থাকে আপনার মস্তিষ্ক
জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় আমরা ঘুমিয়ে কাটাই। আর আমাদের সার্বিক সুস্বাস্থের ওপর ঘুমের প্রভাব তো অনিবার্য। কিন্তু ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় কী ঘটে আমাদের শরীরে? বাকি শরীরটা অচল থাকলেও, ঘুমের মাঝে আমাদের মস্তিষ্ক কিন্তু ঠিকই কাজ করে চলে! জেনে নিন ঘুমন্ত অবস্থাতেও কী কী করতে থাকে আপনার মস্তিষ্ক।
১) সিদ্ধান্ত নেয়
দিনের বেলায় আমরা যেসব সিদ্ধান্ত নিতে পারি না, ঘুমন্ত অবস্থায় সেসব সিদ্ধান্ত নেয় আমাদের মস্তিষ্ক এবং সে অনুযায়ী পরের দিন কাজ করার জন্য প্রস্তুত হয়। দিনের বেলায় পাওয়া তথ্য এবং স্মৃতি যাচাই-বাছাই করে জটিল সব সিদ্ধান্ত নিতে পারে মস্তিষ্ক, ঘুমন্ত অবস্থাতেই।
২)স্মৃতি তৈরি করে, মজবুত করে রাখে এবং ভুলে যাওয়া স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়
সারাদিনে আপনি যা যা করলেন, মস্তিষ্ক তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি তৈরি করে। এর পাশাপাশি সে পুরনো স্মৃতিগুলোকে আরও মজবুত করে এবং নতুন ও পুরনো স্মৃতির মাঝে সংযোগ সৃষ্টি করে। মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস অংশ এর জন্য কাজ করে। আর ঘুম কম হলে হিপ্পোক্যাম্পাসের কাজ ব্যহত হয়, ফলে স্মৃতি তৈরির এই প্রক্রিয়ায় দেখা যায় ত্রুটি। এ জন্য ঘুম কম হলে আমরা নতুন জিনিস শিখতে পারি না। খুব কম সময়ে স্মৃতি ভুলে যেতে থাকি। পরীক্ষার আগের দিন রাত্রে না ঘুমিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেবার আগে এ ব্যাপারে ভেবে দেখবেন। কারণ ঘুম না হলে পড়া মনে থাকার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত!
পুরনো স্মৃতি মজবুত করার পাশাপাশি ভুলে যাওয়া স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে কাজ করে ঘুম। বিশেষ করে কোনও কাজ অনেকদিন না করার ফলে যদি তাতে আপনার দক্ষতা কমে যায় বা একেবারেই চলে যায়, তাহলে ঘুম এই হারানো স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে পারে।
৩)সৃজনশীলতা বাড়ায়
ঘুমের মাঝে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করে আপনার মস্তিষ্ক। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ঘুম থেকে উঠে নতুন নতুন সব আইডিয়া পেয়ে যান শিল্পীরা। এর কারণ হলো ঘুমন্ত অবস্থায় মস্তিষ্ক এমন সব বিষয়ের মাঝে সংযোগ খুঁজে পায় যা জাগ্রত অবস্থায় পাওয়া সম্ভব নয়।
৪)টক্সিন দূর করে
ইঁদুরের ওপর একটি গবেষণায় দেখা যায়, ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের মস্তিষ্কের কোষগুলোর মাঝে দূরত্ব বেড়ে যায়। ফলে মস্তিষ্ক তার মাঝে জমে থাকা টক্সিন দূর করতে পারে সহজে, যে টক্সিন সারা দিন ধরে জমা হতে থাকে। যথেষ্ট ঘুম না হলে মস্তিষ্ক এসব টক্সিন দূর করার সুযোগ পায় না ফলে দেখা দেয় আলঝেইমার্স এবং পারকিনসনস এর মতো রোগ।
৫)নতুন নতুন কাজ করতে শেখে
ড্রাইভিং, সাইক্লিং, সাঁতার বা নতুন কোনো খেলা শেখার মতো শারীরিক কাজগুলো শেখার প্রক্রিয়া চলে ঘুমের মাঝেই। বিশেষ করে ঘুমের REM পর্যায়ে। এ সময়ে মস্তিষ্ক এসব কাজের স্মৃতিকে দীর্ঘমেয়াদি করে যাতে কাজটা করার অভ্যাস আমাদের মাঝে শক্তপোক্ত হয়ে যায়।
৬) আপনার ওজন কমায়
ঘুমের সময়ে আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে মস্তিষ্ক। এ সময়ে আপনার শরীর থেকে পানি বের হয় যায় নিঃশ্বাস এবং ঘামের সাথে। আর এ সময়ে আপনি খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করেন না বলে দিনের বেলার চাইতে দ্রুত ওজন কমে রাতের বেলায়।।
৭) পুরনো কিছু ঘটনার ক্রম মনে করিয়ে দেয়
পুরনো কিছু ঘটনার স্মৃতি মনে আছে আপনার। কিন্তু কোনটির আগে কোনটি ঘটেছে তা মনে রাখতে পারেন না অনেকেই। যেমন আপনি আগে সাইকেল চালানো শিখেছিলেন নাকি সাঁতার? ঘটনার ক্রম মনে করার ক্ষেত্রে ঘুমের গুরুত্ব আছে। ভালো ঘুমের ফলে ঘটনার ক্রম ঠিক থাকে এবং মনে করাটা সহজ হয়।
Leave a comment
You must be logged in to post a comment.