বাংলাদেশী হাফেজ মো. নুরুজ্জামানের উদ্ভাবন বাতাসে চলবে মটরসাইকেল
হবিগঞ্জে বাতাস চালিত মোটর সাইকেল উদ্ভাবন করেছেন হাফেজ মো. নুরুজ্জামান। মোটর সাইকেলটি চালাতে কোনো ধরনের জ্বালানি তেল বা গ্যাস প্রয়োজন হবে না। প্রয়োজন নেই ব্যাটারিরও।
এ মোটর সাইকেল চালানোর জন্য প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে মাত্র ৯১ পয়সা।
অথচ বর্তমান প্রযুক্তিতে বাজারে চালু মোটর সাইকেলের ব্যয় হয় ২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩ টাকা।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি গ্রামের কৃষক মো. সৈয়দ আলী ও মোছাম্মত রোকেয়া বেগমের ৬ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ২০ বছরের তরুণ উদ্ভাবক হাফেজ মো. নুরুজ্জামান।
বর্তমানে চট্টগ্রাম শ্যামলী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যয়নরত মো. নুরুজ্জামান নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর ফুলতলী আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর গাউছিয়া একাডেমি থেকে কোরআনে হাফেজ হন।
ছোটবেলা থেকেই আবিষ্কারের নেশায় পায় এই উদ্ভাবককে।
ফুলতলী মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে নুরুজ্জামানের কারিগরি প্রতিভার দিকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ ফরহাদ সাদ উদ্দিনের নজর পড়েন। তার উত্সাহ ও সহযোগিতায় নুরুজ্জামান ছোটখাটো যান্ত্রিক খেলনা তৈরিতে সক্ষম হন।
পরবর্তী সময়ে তিনি চট্টগ্রামে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নকালে ২০১১ সাল থেকে বাতাস চালিত মোটর সাইকেল তৈরির কাজ শুরু করেন। টানা ২ বছর সাধনার পর তিনি এটি তৈরিতে সক্ষম হন। দীর্ঘ গবেষণায় তার প্রায় ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এজন্য তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে।
তবে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ, পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তার স্বপ্ন সফল হয়। গত ১০ মার্চ হবিগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে নুরুজ্জামানের তৈরি বাতাস চালিত মোটর সাইকেলের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
প্রদর্শনীতে উপস্থিত সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বিশিষ্টজন তার উদ্ভাবনী শক্তি দেখে বিস্মিত হন। উক্ত কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বলেন, নুরুজ্জামান বাতাস চালিত মোটর সাইকেল আবিষ্কার করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
মোটর সাইকেলটির ডিজাইন তিনি নিজেই তৈরি করেন। কাঠ, লোহা, অ্যালোমনিয়াম শিট ইত্যাদি ব্যবহার করে মোটর সাইকেলটি তৈরি করা হয়েছে। নুরুজ্জামান জানান, ইঞ্জিনের মধ্যে এমন কিছু বিশেষত্ব রয়েছে যা এর আগে ব্যবহূত হয়নি।
উচ্চতর প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই যানটিকে বাজারে চালু মোটর সাইকেলের চেয়েও দ্রুতগামী হিসেবে তৈরি করা সম্ভব। এই প্রযুক্তি শুধু মোটর সাইকেলের জন্য প্রযোজ্য নয় বরং অন্যান্য যানবাহনেও ব্যবহার যোগ্য বলে নুরুজ্জামান দাবি করেন।
ইতোমধ্যে অনেক কোম্পানি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মোটর সাইকেলটি উত্পাদনের ব্যাপারে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। কিন্তু গবেষণার কোনো সুযোগ-সুবিধা না থাকায় তিনি এ প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করেননি। এমনকি বিদেশে যাওয়ার প্রস্তাবও রয়েছে।
তবে তিনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা ভালো কোনো দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তার গবেষণালব্ধ বাতাস চালিত মোটর সাইকেল উৎপাদন করে স্বল্পমূল্যে এদেশের মানুষের কল্যাণে বাজারজাত করতে আগ্রহী।
Leave a comment
You must be logged in to post a comment.