বিল গেটসের সম্পদ বাড়ান যিনি!
বিল গেটসের সম্পদের বর্তমান আর্থিক মূল্য ৮ হাজার ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার। প্রতিদিন এই সম্পদ আরও বাড়ছে। বিল গেটস তাঁর দাতব্য কাজ নিয়েই সব সময় ব্যস্ত থাকেন! তাহলে তাঁর এই সম্পদ তৈরির নেপথ্য কারিগর কে?
বিল গেটসের সম্পদ তৈরির নেপথ্যের কারিগরের নামটি সম্ভবত আপনি খুব কমই শুনেছেন। মাইকেল লারসন। একজন আড়ালের মানুষ।
আজ থেকে দুই দশক আগে যখন বিল গেটসের সম্পদ ছিল মাত্র ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার, তখনই লারসনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন গেটস। সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে বিল গেটসের সম্পদের নেপথ্য কারিগর এই মাইকেল লারসনের প্রোফাইল প্রকাশিত হয়েছে।
বিল গেটসের ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাসকেড ইনভেস্টমেন্ট এলএলসি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন লারসান। এই প্রতিষ্ঠানটি বিল গেটস নিজে প্রতিষ্ঠা করেন।
একটা সময় বিল গেটসের অর্থ-সম্পদ বা আয় বলতে ছিল ওই মাইক্রোসফটই। কিন্তু বছরের পর বছর ধরেই মাইক্রোসফটে থাকা তাঁর শেয়ার বিক্রি করে চলেছেন বিল গেটস। এই হিসেবে তাঁর তো এখন পথে বসে যাওয়ারই কথা! অনেকেই ধারণা করছেন, মাইক্রোসফটের শেয়ার বিক্রি করার পর যে অর্থ তিনি পান তা সরাসরি দাতব্য কাজে ব্যয় হয়। কিন্তু পুরো প্রক্রিয়াটি কাজ করে আরেকটু ভিন্নভাবে।
যদিও বিল গেটস নিজে বিভিন্ন প্রযুক্তি বিষয়ে বিনিয়োগ করেন, কিন্তু গেটসের অর্থ কোথায় কীভাবে খরচ হবে তার দায়িত্ব পালন করেন ক্যাসকেডের লারসন। তিনিই বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিল গেটসের অর্থের বিনিয়োগ নিশ্চিত করেন। গেটসের অর্থকে কাজে লাগান তিনিই। বর্তমানে বিল গেটসের বিভিন্ন রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ রয়েছে এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন—কানাডিয়ান ন্যাশনাল রেলওয়ে, অটোনেশন ইনকরপোরেশন, রিপাবলিক সার্ভিস ইনকরপোরেশন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের শেয়ার রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যে অর্থ আসে তা দিয়েই গেটসের দাতব্য খরচ উঠে আসে।
যদিও বিল গেটস তাঁর দাতব্যপ্রতিষ্ঠান বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে ৩ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার দান করেছেন; তবুও গেটসের সম্পদের পরিমাণ কমবে না। কিন্তু এর জন্য ধন্যবাদ পাওনা ওই লারসনেরই। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে যত দিনে তাঁর মোট সম্পদ থেকে ৩ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার স্থানান্তরিত হবে, তত দিনে লারসনের সুবাদেই দ্রুতই আবারও তা পুষিয়ে যাবে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিল গেটস তাঁর সঙ্গে লারসনের অংশীদারত্বের দুই দশক পূর্তিতে সিয়াটলের বাড়িতে একটি জাঁকালো অনুষ্ঠান করেছিলেন। লারসনের সম্মানে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানকে বিরল একটি অনুষ্ঠান হিসেবেই ধরা হয়। কারণ, গেটস ও লারসন দুজনের মধ্যে অন্তরঙ্গ যোগাযোগের বিষয়টি ততটা স্পষ্ট নয়। তাঁদের অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবেও ধরা যায় না। এমনকি দুজন খুব বেশি দেখা-সাক্ষাৎ করেন না।
ওই অনুষ্ঠানে বিল গেটস অতিথিদের বলেন, ‘লারসনের প্রতি তাঁর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে।’ এর অর্থ, গেটসের কোনোরকম নাক গলানো ছাড়াই নিজ থেকেই গেটসের অর্থ বিনিয়োগ করা, তা দিয়ে কেনাকাটা করতে পারেন লারসন। আর গেটসের অর্থ এভাবে গোপনে বাড়িয়ে চলেছেন লারসন। অত্যন্ত গোপনীয় এই মিশনের জন্য লারসন ইতিমধ্যে খ্যাতি পেয়েছেন ‘গেটসকিপার’ নামে।
অবশ্য পাবলিক লিমিটেড প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগকারীর নাম প্রকাশের শর্ত হিসেবে অনেক সময় ক্যাসকেডের কথা স্বীকার করতেই হয়। ক্যাসকেড গোপনে কোনো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করলেও অনেক সময় তা গোপন থাকে না, তবে বিনিয়োগকারী হিসেবে লারসন তাঁর প্রতিষ্ঠান ও বিল গেটসের নাম গোপন রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যান।
বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটসউদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অনেক কর্মকর্তাকে এমন চুক্তিতে সই করতে হয়, যাতে তিনি প্রতিষ্ঠান ছেড়ে গেলেও ক্যাসকেডের নাম প্রকাশ করতে পারবেন না। তাঁর প্রতিষ্ঠান এক হাজার কোটি থেকে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সানফ্রান্সিসকোর রিজ-চার্লটন হোটেল যখন এক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়, তখন এর মধ্যে ক্যাসকেডও ছিল। কিন্তু এই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে বিল গেটস ও ক্যাসকেডও যে রয়েছে তা গোপন ছিল। একবার লিমিটেড লায়াবিলিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান রিয়েল এস্টেট কেনার সময় ক্যাসকেডের নাম চুক্তির মধ্যে রাখায়, সে প্রতিষ্ঠানটিকে বাদ দিয়েছিলেন লারসন।
লারসন এমনভাবে অনেক বিষয়ই গোপন রেখেছেন যে, অনেকেই জানেন না ক্যাসকেডের মাধ্যমে বিলাসবহুল হোটেল চেইন ফোর সিজনসে বড় ধরনের শেয়ার রয়েছে বিল গেটসের।
লারসনকে খুবই হিসেবি বা মিতব্যয়ী বলে মনে করা হয়। তাঁর বস বিল গেটসের অর্থ সাশ্রয়ের দিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেন তিনি। উদাহরণটা ক্যাসকেডের কর্মীদের দিয়েই দেওয়া যায়। ক্যাসকেডের ১০০ জন কর্মী কোথাও ভ্রমণে গেলে সস্তার হোটেলে থাকতে হয়। নিজেদের বিনিয়োগ করা ফোর সিজনসের কোনো হোটেলে কোনো ব্যবসায়িক কাজে গেলেও থাকতে পারবেন না তাঁরা। এমনকি ফোর সিজনসের কোনো ব্যবসায়িক কাজে গেলেও থাকার জন্য কম দামের হোটেলই তাঁদের বেছে নিতে হবে।
লারসন প্রসঙ্গে বিল গেটস বলেন, ‘মাইকেল লারসন যা করছেন, তাঁর জন্যই মেলিন্ডা (বিল গেটসের স্ত্রী) আর আমি মুক্তভাবে স্বাস্থ্যকর ও উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত একটি উন্নত বিশ্ব তৈরির স্বপ্ন দেখতে পারছি।’
তবে, শেষ পর্যন্ত বিল গেটসের সব অর্থই দাতব্য কাজে ব্যয় হবে। বিল ও মেলিন্ডা গেটস তাঁদের সম্পদের ৯৫ ভাগই ‘গিভিং প্লেজ’ নামের কর্মসূচির মাধ্যমে মানবকল্যাণে ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
কিন্তু তত দিনে বিল গেটসের সম্পদ আরও বাড়িয়ে তোলার লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন মাইকেল লারসন। (বিজনেস ইনসাইডার)
Leave a comment
You must be logged in to post a comment.