মস্তিষ্ক স্ক্যানে সহজেই ধরা পড়বে স্বপ্ন !
স্বপ্নের ঘটনা অনেকের মনে থাকে, অনেকের থাকে না। কারও মনে পড়ে অস্পষ্ট। হলিউডের অস্কারজয়ী ইনসেপশন ম্যুভিতে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর ওপর স্বপ্ন ধরার জন্য বিশেষ একটা যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। ম্যুভিতে দেখানো ঐ যন্ত্রটির সাহায্যে যেকোনো ব্যক্তির স্বপ্ন সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া সম্ভব করা হয়েছে। কিন্তু এবার আর ম্যভিতে নয়, বাস্তবে এমনই এক যন্ত্রের নকশা করছেন জাপানের শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডভান্সড টেলিকমিউনিকেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউট ইন্টারন্যাশনালের স্নায়ুবিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ব্রেন বা মস্তিষ্ক স্ক্যান করে ধরা যাবে স্বপ্ন। আপনি কী স্বপ্ন দেখেছেন, তা সহজেই জানা যাবে ব্রেন স্ক্যানিংয়ে। গবেষকরা বলছেন, ঘুমের আগমুহূর্তে মানুষ যে স্বপ্ন দেখে, MRI স্ক্যান করে তার ছবি পাওয়া সম্ভব।
প্রতিষ্ঠানটির নিউরো-ইনফরমেটিকস বিভাগের প্রধান ইয়াকিয়াসু কামিতানি নেতৃত্বে গবেষকরা তিন স্বেচ্ছাসেবকের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। এ পরীক্ষায় বিশেষায়িত যন্ত্র FMRI স্ক্যানার ব্যবহার করে স্বেচ্ছাসেবকদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়। গবেষণাকালে স্বেচ্ছাসেবকদের স্ক্যানারের ভেতরে ঘুমাতে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর পর তাদের জাগানো হয়। তাদের দেখা স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে এভাবে ২০০ বার ঘুমাতে দিয়ে তাদের দেখা স্বপ্ন সম্পর্কে জানা হয়। EEG ইলেকট্রড নামক বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে তারা প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবকের মস্তিষ্ক আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং EEG সাক্ষর দেখা গেলে বিজ্ঞানীরা তাদের ঘুম থেকে জাগিয়ে স্বপ্নের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। ব্যবস্থাটিকে বিশেষজ্ঞরা হিপনাগগিক ইমেজারি বলে থাকেন। ঘুমন্ত মানুষ স্বপ্ন দেখলেই যন্ত্রে এ EEG সাক্ষর ভেসে ওঠে। সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, এখন পর্যন্ত ৬০ ভাগ সঠিক স্বপ্ন ধরতে সক্ষম হয়েছেন গবেষকরা।
কামিতানি ও তার সহকর্মীরা অ্যালগরিদম ব্যবহার করে একটি ভিজুয়াল ইমেজারি ডিকোডার তৈরি করেন। স্বেচ্ছাসেবকদের শতাধিক চিত্র দেখিয়ে তাদের মস্তিষ্ক কীভাবে ক্রিয়া করছে, তার সঙ্গে তুলনা করে তারা স্বপ্নে কী দেখছেন, তা জানাবে এ ডিকোডার। কামিতানি জানান, তাদের স্বপ্ন ধরার প্রক্রিয়াটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। স্বপ্নের ক্রিয়া, রঙ, আবেগ জানার প্রযুক্তি এখনো অপ্রতুল বলে জানান তিনি। ডিকোডারটি শুধু ঘুম থেকে জাগার ১৫ সেকেন্ড আগে দেখা স্বপ্ন সম্পর্কে ধারণা দেবে। আবার মানুষভেদে ভিন্ন ডিকোডার তৈরি করতে হবে, যেখানে শতাধিক চিত্রের জন্য তার মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া জানার প্রয়োজন পড়বে। ডিকোডারটির মাধ্যমে শুধু স্বপ্নের ক্রিয়া ও ধরন জানা সম্ভব হবে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির স্নায়ুবিজ্ঞানীরা। প্রফেসর কামিতানি জানান, আমরা মস্তিষ্ক স্ক্যান করে ঘুমন্ত অবস্থায় তার কার্যকলাপ ধরতে সক্ষম হয়েছি। এটি অবশ্যই একটি বড় সফলতা।
Leave a comment
You must be logged in to post a comment.