কুরআন-হাদিসে মধু ও এর ঔষধি গুণ
মধু শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এতে অনেক রোগের নিরাময় রয়েছে। রয়েছে অনেক রোগের প্রতিষেধকও। বিজ্ঞানময় কিতাব আল কুরআনে মধুর বর্ণনা রয়েছে। ‘আর আপনার রব মৌমাছিকে ইঙ্গিত দিলেন পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং মানুষ যেসব গৃহ নির্মাণ করে তাতে মৌচাক তৈরি করতে।
অতঃপর চোষণ করে নাও প্রত্যেক প্রকার ফল হতে, তৎপর তোমরা রবের সহজ সরল পথে চলতে থাকো; আর তার উদর হতে নানা বর্ণের পানীয় (মধু) নির্গত হয়; যাতে মানুষের জন্য আরোগ্য রয়েছে। নিশ্চয়ই এতে চিন-াশীল সমপ্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন’ (১৬ নম্বর সূরা নাহল, আয়াত ৬৮-৬৯)। হাদিসে আছে, রাসূল সা: বলেন, পেটের পীড়াসহ অনেক অসুখ-বিসুখের চিকিৎসা হচ্ছে মধু।
একদা এক লোক হজরত মুহাম্মদ সা:-এর নিকট এসে তার ভাইয়ের পেটের সমস্যার কথা জানালেন। রাসূলে পাক সা: বললেন, তাকে মধু খাওয়াও। লোকটি দ্বিতীয় দিন এলেন। হুজুর সা: বললেন, মধু খাওয়াও। লোকটি তৃতীয় দিনেও এসে বললেন, হুজুর সা:, আমি তো তাকে মধু খাইয়েছি। হুজুর সা: বললেন, আল্লাহ তায়ালা সত্য বলেছেন; তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যা বলছে। তাকে মধু খাওয়াও। তারপর মধু খাওয়ানোতেই তার পাকস’লীর সমস্যা ভালো হলো (বুখারি)। হাদিসে আরো এসেছে, নবী করিম সা: বলেছেন, দু’টি আরোগ্য ব্যবহার করো; কুরআন এবং মধু (তিরমিজি, ইবনে মাজা, বায়হাকি)।
আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সা: সুন্নতে নিশ্চয়ই মানুষের জন্য উপকার নিহিত। মধুতে নিশ্চয়ই আরোগ্য রয়েছে। প্রাচীনকালে মিসরীয়, গ্রিক ও রোমান সভ্যতায় ত্বকের ক্ষত চিকিৎসায় ওষুধ হিসেবে মধু ব্যবহারের কথা জানা যায়। ইদানীং বিভিন্ন গবেষণায় মধুর উপকারিতার কথা প্রমাণিত হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মধু গলার খুসখুসে ভাব কমায়। লবণ-পানির সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে গড়গড়া করলে এ ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায়। মধু কাশি কমায়। শিশুদের শ্বাসনালীর সংক্রমণে কাশির চিকিৎসায় মধু কার্যকর (সূত্র : Arch Pediatr Adolesc Med. 2007; 161: 1140-1146, 1149-1153)। মধু মুখের ভেতর রোগজীবাণুর বংশ বৃদ্ধি কমাতে সহায়ক। মুখের ঘায়ে মধু কার্যকর। পাকস’লীর অ্যাসিডিটি ও আলসারে মধু উপকারী। ত্বকের ক্ষত, কাটা বা পোড়ায় মধু খুবই কার্যকর।
মধুতে রয়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ ফ্রুকটোজ, ৩১ শতাংশ গ্লুকোজ, ১৭ শতাংশ পানি, বাকি অন্যান্য উপাদান। গ্লুকোজ আর ফ্রুকটোজের মিশ্রণে মধুর অসমোলারিটি খুব বেশি। মধুর বেশি অসমোলারিটির কারণে রোগজীবাণু বাঁচতে পারে না। মধুর গ্লুকোজ অক্সিডাইজড হয়ে গ্লুকোনিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। মৌমাছির শরীর থেকে আসা এক পাচক রসের মাধ্যমে মধুতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড তৈরি হয়। এই হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ত্বকের ক্ষতে রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর। মধুর বেশি অসমোলারিটি, গ্লুকোনিক অ্যাসিড ও হাইড্রোজেন পার অক্সাইড- সবই রোগজীবাণু ধ্বংসে সহায়ক। মধু ত্বকের ক্ষতের প্রদাহ কমায়, ফোলা কমায়।
ত্বকের ক্ষতে মধুর পাতলা প্রলেপ ক্ষতে রোগজীবাণুর বৃদ্ধি রোধ করে, প্রদাহ-ব্যথা-ফোলা ইত্যাদি কমায়, ত্বকের সাথে ব্যান্ডেজের লেগে যাওয়া রোধ করে। ঘা শুকাতে সহায়তা করে। ত্বক সামান্য পুড়ে গেলে তাতে সাথে সাথে মধুর প্রলেপ দিলে ফোসকা পড়ে না বা ব্যথা হয় না। পোড়ার দাগ কমাতেও সহায়ক মধু। এক কথায়, ত্বকের ক্ষত চিকিৎসায় মধু খুবই কার্যকর বিভিন্ন ফাইটোকেমিক্যালের উপসি’তির কারণে মধুর আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্ষমতা। শরীরে প্রতিনিয়ত উৎপন্ন হওয়া ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যাল দূর করতে পারে মধু।
মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এক কথায় শরীরকে সুস’ রাখতে, রোগ প্রতিরোধ করতে ও রোগ নিরাময়ে মধু খুবই কার্যকর। বিজ্ঞানময় কুরআন ও হাদিসে মধুর উপকারের কথা বহু আগেই বর্ণিত হয়েছে। নতুন নতুন গবেষণায় মধুর আরো অনেক গুণের কথা আমাদের জানা হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন