মানসিক রোগের চিকিৎসা এবং বর্বরতা
যদিও মানসিক রোগ বিজ্ঞানের কোন পাঠ্যপুস্তকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের আবিষ্কারক জার্মান চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের অবদানের কোন স্বীকৃতি দেওয়া হয় না ; তথাপি বলা যায় তিনিই একমাত্র চিকিৎসা বিজ্ঞানী যিনি সর্বপ্রথম মানসিক রোগকে এক ধরণের রোগ বলে ঘোষণা করেছিলেন। তাই তিনি মানসিক রোগীদের প্রতি নির্দয় আচরণ করতে নিষেধ করতেন এবং তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে ডাক্তারদেরকে পরামর্শ দিতেন। তিনি আরও বলতেন যে, “যার কান্ডজ্ঞান বা দায়িত্বজ্ঞান আছে, একমাত্র তাকেই কোন অপকর্মের জন্য শাস্তি দেওয়া যায়”। তাই হ্যানিম্যানকে বলা যায় পৃথিবীর প্রথম মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (psychiatrist)। আজ থেকে দুইশ বছর পূর্বে হ্যানিম্যানের সময়ের এবং তাঁর পূর্বেকার সমস্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এবং ডাক্তাররা মানসিক রোগকে জ্বীণ-ভূত-প্রেতাত্মা ইত্যাদির আছড় বলে মনে করতেন। তাই সেকালের (এলোপ্যাথিক) ডাক্তাররা মানসিক রোগীদেরকে প্রহার করা, বেত্রাঘাত করা, শিকল দিয়ে বেধে রাখা, লাঠি দিয়ে খুচিয়ে উত্যক্ত করা, বালতি দিয়ে তাদের গায়ে ঠান্ডা পানি নিক্ষেপ করা ইত্যাদি ইত্যাদি দুর্ব্যবহারের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়াকেই মানসিক রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা বলে মনে করতেন। তখনকার দিনে বিভিন্ন আশ্রমে থাকা মানসিক রোগীদের সাথে নানা রকমের বিদ্রুপাত্মক দুর্ব্যবহারের মাধ্যমে সাপ্তাহিক ছুটিতে বেড়াতে আসা লোকদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করা হতো। এমনকি চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথাকথিত এই চরম উন্নতির (!) যুগেও এলোপ্যাথিক মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞরা মানসিক রোগীদের ওপর নানানভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করে থাকেন ; যেমন- মানসিক রোগের চিকিৎসার নামে মস্তিষ্কের সামনের দিকের নার্ভ (neurotransmitters) কেটে দেওয়া (frontal lobotomies), বিদ্যুতের শক দেওয়া (etectroshock therapy), নারীদের যৌন উন্মত্ততার (nymphomaniacs) চিকিৎসার জন্য ডিম্বাশয় কেটে ফেলে দেওয়া (ovarectomies) ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই বলা যায়, এখনকার দিনে মনোরোগ চিকিৎসা বিজ্ঞান যে স্ট্যান্ডার্ডে এসে পৌঁছেছে, আজ থেকে দুইশ বছর পূর্বেও হ্যানিম্যানের স্ট্যান্ডার্ড ইহার চাইতে ভালো ছিল এবং মানসিক রোগীরা এখনকার মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের নিকট থেকে যতটুকু সদয় ব্যবহার পেয়ে থাকেন, দুইশ বছর পূর্বেই হ্যানিম্যান তাঁর অনুসারী হোমিও ডাক্তারদেরকে ইহার চাইতেও অধিক সদয় ব্যবহারের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। সে যাক, হ্যানিম্যানই প্রথম ঘোষণা করেন যে, এলোপ্যাথিক বা অন্যান্য নানা রকমের কুচিকিৎসার মাধ্যমে শারীরিক রোগকে জোর করে চাপা দেওয়াই (suppression) হলো অধিকাংশ মানসিক রোগের মুল কারণ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে হ্যানিম্যানের আরেকটি ঐতিহাসিক অবদান হলো, তিনিই প্রথম মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধকে স্বয়ং সুস্থ মানুষের শরীরে গুণাগুণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। এজন্য তিনি একটি পরীক্ষা পদ্ধতি আবিষ্কার করেন এবং এটি বাস্তবে প্রচলন করে যান। পক্ষান্তরে প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইঁদুর-বিড়াল-বানর-গিনিপিগ-খরগোস ইত্যাদি বোবা জানোয়ারের ওপর ঔষধ পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। বোবা জন্তুরা যেহেতু তাদের কষ্টের কথা বলতে পারে না, ফলে ঔষধ তাদের শরীর-মনে যে-সব রোগ সৃষ্টি করে, তার অনেকগুলোই জানা সম্ভব হয় না। ফলে কোন ঔষধটি মনের ওপর কি কি ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তা সে-সব পন্থী চিকিৎসকরা জানেন না। কেননা তারা কেবল শরীরিক পরিবর্তন, বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের তাপমাত্রা-আকৃতি-রং ইত্যাদির পরিবর্তন, পায়খানা, প্রস্রাব, রক্ত ইত্যাদির পরিবর্তন ইত্যাদি পরীক্ষা করে ঔষধের একশান-রিয়েকশান জানার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে হ্যানিম্যান এবং তাঁর অনুসারী হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা, হোমিও ডাক্তাররা এবং হোমিও কলেজের নিবেদিতপ্রাণ ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিটি হোমিও ঔষধ নিজেরা সুস্থ শরীরে দীর্ঘদিন খেয়ে তাদের দেহ-মনে সে-সব ঔষধের গুণাগুণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। হ্যানিম্যান তাঁর জীবনকালে ৯০টি ঔষধ নিজের শরীরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার বিস্তারিত গুণাগুণ তাঁর রচিত “মেটেরিয়া মেডিকা পিউরা” (Materia Medica Pura) নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করে গেছেন এবং বলতে হয় সিনকোনা (quinine) ছিল তাঁর জীবনে তাঁর নিজের শরীরে পরীক্ষা করা ঔষধগুলোর মধ্যে প্রথম ঔষধ।
হ্যানিম্যানের জীবনকালে এবং তাঁর মৃত্যুর পরে অন্যান্য হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা হ্যানিম্যানের রীতি অনুসারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আরো হাজার হাজার হোমিও ঔষধ আবিষ্কার করে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সার্থকভাবে ব্যবহার করে গেছেন। প্রাসঙ্গিকভাবে বলতে হয় যে, ঔষধের মতো মারাত্মক বিষাক্ত পদার্থকে নিজের শরীরে পরীক্ষা করার মধ্যে যে কতো অপরিসীম ত্যাগের মানসিকতা কাজ করে, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কেননা এসব ঔষধের মধ্যে আছে হৃদরোগ, যক্ষ্মা, ক্যানসারের ঔষধ যা দীর্ঘদিন খেয়ে পরীক্ষা করতে গিয়ে হার্ট এটাক, যক্ষ্মা, ক্যান্সার প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি আছে ষোলআনা। এমন অকাল মৃত্যুর ঘটনাও খোজঁলে অনেক পাওয়া যেতে পারে। হ্যানিম্যানের অনুসারী একজন ব্রিটিশ হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানী ছিলেন ডাঃ জে. সি. বার্নেট (James Compton Burnett, M.D.)। এই বার্নেট ক্যান্সারের অনেকগুলো হোমিও ঔষধ আবিষ্কার করেছিলেন এবং দীর্ঘদিন সেগুলো খেয়ে নিজের শরীরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। হ্যানিম্যান এবং তাঁর অনুসারী অধিকাংশ হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানী যেখানে গড়ে ৮০ বছরের বেশী আয়ু পেয়েছেন, সেখানে বার্নেট মৃত্যুবরণ করেন মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে। আজ সবাই একমত যে, ক্যান্সারের অনেকগুলো ঔষধ নিজের শরীরে পরীক্ষা করাই ছিল তাঁর অকালমৃত্যুর মুল কারণ। মানবজাতিকে রোগ-ব্যাধির কড়ালগ্রাস থেকে মুক্ত করতে হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা যেভাবে হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন, এই রকম ত্যাগের ঘটনা সত্যি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, অধিকাংশ মানুষ মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য হোমিও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে না গিয়ে বরং মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের স্মরণাপন্ন হয়ে থাকেন। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমরা যাদেরকে জানি, তাদের সবাই এলোপ্যাথিক ডাক্তার। ওনারা খুবই মেধাবী, জ্ঞানী, গুণী, সুদীর্ঘ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইত্যাদি ইত্যাদি সবই সত্য। কিন্তু মানসিক রোগের চিকিৎসা করার মতো ঔষধ ওনাদের হাতে নাই। ফলে তাদের দৃষ্টান্ত অনেকটা “ঢাল নাই তলোয়ার নাই, নিধিরাম সরদার”-এর মতো। কেননা তাদের কোন ঔষধই মানুষের মনের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় নাই। ফলে মানসিক রোগীদেরকে তারা কেবল মাথা ঠান্ডা করার ঔষধ (Tranquillizer) অথবা ঘুমের ঔষধ (Hypnotic) দিয়ে যুগের পর যুগ চিকিৎসা চালিয়ে যান। আমাদের শরীরের একটি নিজস্ব শক্তিশালী রোগ নিরাময় ক্ষমতা আছে। এই কারণে অধিকাংশ ছোট-বড় শারীরিক রোগ বিনা চিকিৎসাতেই সেরে যায়। তেমনিভাবে অধিকাংশ মানসিক রোগও শরীরের নিজস্ব রোগ নিরাময় ক্ষমতার (immune system) বদৌলতে বিনা ঔষধেই সেরে যায়। মাঝখানে এসব ঘুমের ঔষধের (Sedative) সুনাম বেড়ে যায় ।
আকস্মিক মানসিক উত্তেজনা (anxiety) থেকে যে-সব মানসিক রোগ হয়, সে-সব রোগ কিছুদিন ঘুমের ঔষধ (sedative) খেলেই সেরে যেতে দেখা যায়। কিন্তু সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, যে-সব মানসিক রোগের মুল কারণ অনেক গভীরে প্রোথিত (miasmatic/ constitutional) ; সে-সব রোগ দীর্ঘদিন যাবত ঘুমের ঔষধ খাওয়ার ফলে ভালো তো হয়ই না, বরং নিশ্চিতভাবে আরোও খারাপের দিকে চলে যায়। বিভিন্ন স্বনামধন্য চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্টানের গবেষণায় অনেক পুর্বে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, এসব মাথা ঠান্ডা রাখার ঔষধ/ ঘুমের ঔষধ আমাদের মস্তিষ্কের নিজেকে নিজে নিরাময় করার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এভাবে এসব ঘুমের ঔষধ আমাদের মস্তিষ্ককে স্থায়ীভাবে নষ্ট করে দেয় এবং তখন মানসিক রোগটি আর আরোগ্যের কোন আশাই থাকে না। বিষয়টি একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করছি। মনে করুন একজন সুস্থ সবল মানুষকে যদি একটি সুপারি গাছের সাথে দীর্ঘদিন এমনভাবে শক্ত করে বেধে রাখা হয় যে, সে এক ইঞ্চিও নড়তে চড়তে না পারে, তাহলে কি হবে ? হ্যাঁ, লোকটি মরে যেতে পারে আর যদি বেঁচেও যায়, তবে তার সারা শরীর অবশ (paralysis) হয়ে যাবে। সে আর জীবনে নড়তে-চড়তে পারবে না এবং তার স্বাভাবিক কাজকর্মও করতে পারবে না। তেমনিভাবে এসব মাথা ঠান্ডার রাখার ঔষধ বা এসব ঘুমের ঔষধ আমাদের ব্রেনকে তার স্বাভাবিক কাজ করতে বাধা দেয় এবং ইহার ফলে দীর্ঘদিন আমাদের ব্রেন তার স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজ-কর্ম করতে না পারার কারণে সেও প্যারালাইসিস হয়ে যায় অর্থাৎ ব্রেনের কাজ করার ক্ষমতা স্থায়ীভাবে (চিরতরে) নষ্ট হয়ে যায় ।
তাই বলা যায়, এসব জটিল মানসিক রোগীদেরকে যদি বছরের পর বছর ঘুমের ঔষধ খাওয়ানোর পরিবর্তে বিনা ঔষধেও ফেলে রাখা হতো, তাহলেও দেখা যেতো শরীরের নিজস্ব রোগ নিরাময় ক্ষমতার বদৌলতেই এদের অধিকাংশই এক সময় রোগমুক্ত হয়ে যেতো। মানসিক রোগীদের চিকিৎসার নামে আমাদের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা জেনেশুনেই এভাবে তাদের সর্বনাশ করে থাকেন। আমাদের জানতে ইচ্ছে করে, এজন্য তারা কোন বিবেকের পীড়া অনুভব করেন কিনা ? হয়ত (হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে) অজ্ঞতার কারণে তাও তারা অনুভব করেন না ; হয়ত তারা ভাবেন আমরা আমাদের বিদ্যা-বুদ্ধি-অভিজ্ঞতা দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি ! এসব মাথা ঠান্ডা রাখার ঔষধের আছে আরো অনেক খারাপ-খারাপ পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া যার কিছু কিছু জানা গেছে আর কিছু ভবিষ্যতে জানা যাবে। ১৯৬৪ সালে যখন এলোপ্যাথিক ঔষধ থেলিডোমাইড (Thalidomide) মার্কেটে আসে, তখন উৎপাদনকারী কোম্পানির পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছিল যে, এটি টেনশানের বা মাথা ঠান্ডা রাখার কিংবা নিদ্রাহীনতার জন্য এ যাবত কালের সবচেয়ে ভালো এবং নিরাপদ ঔষধ। কিন্তু দুই বছরের মাথায় ১৯৬৬ সালে জানা যায় যে, যে-সমস্ত গর্ভবতী মহিলা থেলিডোমাইড খেয়েছেন, তারা হাত এবং পা বিহীন পঙ্গু, বিকলাঙ্গ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। পশ্চিম জার্মানীর স্বাস্থ্য বিভাগ একাই থেলিডোমাইড খাওয়ার ফলে দশ হাজার বিকলাঙ্গ শিশু জন্মের ঘটনা রেকর্ড করেছিল। সত্যিকার অর্থে এটি ছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য এবং নির্মম ঘটনা। হোমিওপ্যাথিতে আছে মানসিক রোগ নিরাময়ের জন্য খুবই কার্যকর অগণিত ঔষধ যাদের বড় ধরণের কোন ক্ষতিকর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নাই। কিন্তু অজ্ঞতার কারণে লোকেরা মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য হোমিও ডাক্তারদের স্মরণাপন্ন হয় না।
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা যদিও সামান্য ডান-বাম করে তাদের কিতাবে অগণিত মানসিক রোগের নাম আমদানী করেছেন ; কিন্তু মোটামুটি সকল মানসিক রোগের চিকিৎসায় সম্বল তাদের একটাই আর তা হলো মাথা ঠান্ডা রাখার ঔষধ (tranquillizer/sedative/hypnotic)। তাদের কুড়ি পৃষ্টার রেকর্ডেও উচ্চতা, ওজন, অতীতে কি কি ঔষধ খেয়েছে ইত্যাদি ছাড়া রোগীর ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে কোন তথ্য পাবেন না। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে মানসিক রোগের পাশাপাশি রোগীর শারীরিক গঠন (constitution) এবং মানসিক গঠন (mental makeup)ও বিবেচনা করা হয়ে থাকে এবং পাশাপাশি উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের জীবনের আবেগময় অধ্যায়, প্রেমিক-প্রেমিকার বিচ্ছেদ, পরিবারের কোন সদস্যের মৃত্যু বা তালাক, কোন অতিপ্রিয় পোষা প্রাণীর মৃত্যু, বিদ্যালয় পরিবর্তন করা, শিক্ষক বা অন্য কারো কর্তৃক অপমান-ভৎর্সনা, ব্যবসায়ে ক্ষতি বা চাকুরি হারানো, পরকাল নিয়ে অতিরিক্ত টেনশান ইত্যাদি ইত্যাদিকেও খুবই গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়। তারপর কয়েক হাজার ঔষধ থেকে বেছে বেছে রোগীর জন্য সর্বাধিক উপযোগী একটি মাত্র ঔষধ নির্বাচন করা হয়। অন্যদিকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা রোগীদেরকে এক সাথে অনেকগুলি ঔষধ দিয়ে থাকেন। ফলে কোন ঔষধটি কাজ করছে আর কোনটি কাজ করছে না তা তারা বুঝতে পারেন না এবং রোগের অবস্থা ভালোর দিকে যেতে থাকলে কখন ঔষধ বন্ধ করতে হবে এবং কোন ঔষধটি বন্ধ করতে হবে, তা ডাক্তারও জানেন না এবং রোগীও জানেন না । আসলে সে-সব মানসিক রোগের ঔষধ আদৌ বন্ধ করা সম্ভব হয় না ; বরং যত দিন যেতে থাকে ঔষধের মাত্রাও তত বাড়াতে হয় । একমাত্র মৃত্যুছাড়া সে-সব ঔষধ বন্ধ করা হয় না । সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, যে-সব আত্মহত্যার খবর প্রকাশিত হয় (Reported suicides) তাদের শতকরা ৮০ ভাগই কোন না কোন মানসিক রোগের (এলোপ্যাথিক) ঔষধ খেতো এবং শতকরা ৫০ ভাগ বিষন্নতা রোগের ঔষধ (antidepressants) খেতো ।
প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে মানসিক রোগ নিরাময়ের জন্য ডাক্তাররা যে ঔষধ দিয়ে থাকেন, অনেক সময় রোগীরা সে-সব (ঘুমের) ঔষধ একসাথে অনেকগুলো খেয়ে আত্মহত্যা করে বসে। কিন্তু হোমিও চিকিৎসায় মানসিক রোগের জন্য ডাক্তাররা যে-সব ঔষধ দেন, সেগুলো একসাথে অনেক বেশী পরিমাণে খেয়েও কোন মানসিক রোগীর পক্ষে আত্মহত্যা করা সম্ভব নয়। মানসিক রোগের প্রচলিত ঔষধগুলো খুবই দামী ; এজন্য অনেককে গর্ব করে বলতে দেখা যায় যে, “জানেন, প্রত্যেক দিন এত এত টাকা ঔষধ খেতে হয় !”। আসলে “চকচক করিলেই সোনা হয় না” এই প্রবাদটি সবারই মনে রাখা উচিত। পক্ষান্তরে মানসিক রোগে ব্যবহৃত হোমিও ঔষধগুলোর মূল্য সেই তুলনায় অনেক অনেক কম ; এতে আপনার চিকিৎসা খরচ কমে যাবে একশ থেকে একহাজার ভাগ । মানসিক রোগের প্রচলিত ঔষধগুলো দীর্ঘদিন খেলে নেশা (drug dependency) হয়ে যায় ; ফলে সেগুলো খাওয়া বাদ দেওয়া যায় না। কারণ সেই ঔষধগুলো খাওয়া ছেড়ে দিলে রোগটি পুনরায় বেড়ে যায় (withdrawal symptoms)। কিন্তু মানসিক রোগের হোমিও ঔষধগুলো দীর্ঘদিন খেলেও নেশা হয় না। মানসিক রোগের প্রচলিত ঔষধগুলোর ক্ষতিকর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া মারাত্মক ; এগুলো আপনার ব্রেন, হার্ট, লিভার, কিডনীর বারোটা বাজিয়ে দিবে। কিন্তু মানসিক রোগের হোমিও ঔষধগুলো শরীরের কোন ক্ষতি তো করেই না বরং একই সাথে শরীরের জন্য ভিটামিনের কাজও করে দেয়। প্রচলিত মাথা ঠান্ডা রাখার ঔষধগুলো (tranquillizer/sedative) মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে পযর্ন্ত হত্যা করে তাদেরকে নিছক রোবটে পরিণত করে ফেলে। যেমন- একজন মানসিক রোগী তার অভিজ্ঞতার কথা বলছিল এভাবে যে, “সিনেমা হল ভর্তি লোকেরা যখন একটি করুণ দৃশ্য দেখে কাদঁছিল, তখন আমি কাদঁতে পারছিলাম না। কেননা তখন আমি মানসিক রোগের সে-সব জনপ্রিয় ঔষধগুলো খাওয়ার ওপরে ছিলাম”। মানসিকভাবে সুস্থতার মানে কি আবেগ-অনুভূতির শূণ্যতা ?
হ্যানিম্যান দুইশ বছর পূর্বে যা শিক্ষা দিয়ে গেছেন এবং এ যুগের মনোরোগ বিশেষজ্ঞরাও যা বিশ্বাস করেন, তা হলো “মনেই আছে মানুষের (সকল গুপ্ত ভান্ডারের) চাবি” (mind is the key to man)। মানুষের শারীরিক-মানসিক জৈবিক প্রক্রিয়ার (vital processes) ছন্দময় গতিই হলো সুস্থতা আর এই ছন্দময় গতিতে (harmony) বিপর্যয়ই হলো রোগ। তাই বলা যায়, রোগের প্রথম সুচনা হয় আমাদের মানসিক স্তরে/ আবেগের স্তরে (emotional level)। পরবর্তীতে সেটি শারীরিক স্তরে আগমণ করে শরীরকে বিকৃত করে থাকে (change in body chemistry)। হোমিওপ্যাথিতে রোগটি আবেগের সতরে থাকার সময়ই নির্মুল করে দেওয়া হয় (early intervention) ; ফলে সেটি আর শারীরিক স্তরে আসার সুযোগ পায় না। কাজেই মানসিক রোগের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির কর্মকৌশল অনেকটা প্রতিরোধমুলক (preventive medicine)। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পিতামাতারা অনেক সময় শিশুদের অস্বাভাবিক মেজাজ-মর্জি দেখেই বুঝতে পারেন যে, তার সন্তানের ভেতরে খারাপ কোন পরিবর্তন ঘটেছে এবং হয়ত শীঘ্রই সে কোন রোগে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে। হয়ত দেখা গেলো একটি শিশু মায়ের সাথে আঠার মতো লেগে থাকে এবং আরেকটি শিশু কাউকেই সহ্য করতে পারে না, একা একা থাকতে চায় । যদি দুটি শিশুই সর্দি অথবা জ্বরে আক্রান্ত হয়, তবে হোমিওপ্যাথিতে তাদের দেওয়া হবে দুই রকমের ঔষধ । শুধু তাই নয়, (শিশুর মেজাজ-মর্জির প্রাথমিক পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে যদি) সঠিক ঔষধ দেওয়া যায়, তবে শিশুর দিকে ধেয়ে আসা সেই রোগটি প্রকৃত অর্থে আর সামনে বাড়তে পারবে না, অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাবে । সত্যিকার অর্থে হোমিওপ্যাথিতে রোগ প্রতিরোধ করার জন্য ঔষধ দেওয়া শুরু হয় শিশু তার মায়ের জরায়ুতে থাকতেই ।
প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি এখনও বুঝতে পারে না যে, একজন গর্ভবতী মাতা মানসিক আঘাত (heartbreak) পেলে সেটি গর্ভস্থ শিশুকে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে ? হ্যাঁ, একজন গর্ভবতী মা যদি তালাক, আপনজনের মৃত্যু প্রভৃতি কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হন, তবে দেখা যাবে তার শিশু সন্তান কিছু শিখতে পারছে না (learning disability), কথা বলতে পারছে না অথবা অনেক দেরীতে কথা বলা শিখছে (speech defect / delayed speech), বুদ্ধিপ্রতিবন্দ্বি (autism) ইত্যাদি সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্ত হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এসব লিঙ্কের ব্যাপারে কিভাবে নিশ্চিত হলেন ? কারণ তারা দেখেছেন এসব শিশুকে মানসিক আঘাতের (heartbreak) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ঔষধগুলো দিলে তারা খুব দ্রুত তাদের সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছেন । একজন হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীর কাছে একবার একজন চল্লিশোর্ধ বয়ষ্ক ব্যক্তি কিছু সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য । তিনি লোকটির সমস্ত লক্ষণ নিয়ে বুঝতে পারলেন যে, তার জীবনে একটি বড় ধরনের মানসিক আঘাতের ঘটনা আছে । লোকটি এমন কোন ঘটনা তার জীবনে নেই বলে জানালেন । পরে লোকটি তার মাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন যে, সে যখন মায়ের গর্ভে আসে তখন তার মা গর্ভপাত করা ইচ্ছা করে ডাক্তারের চেম্বারে পযর্ন্ত গিয়েছিলেন। পরে ভদ্রমহিলা তার ইচ্ছা পরিবর্তন করে বাসায় চলে আসেন । তাকে হত্যা করার জন্য তার মায়ের ইচ্ছার এই বেদনাদায়ক ছাপ মাতৃজঠর থেকেই তার মস্তিষ্কে আঁকা ছিল । ফলে চল্লিশ বছর বয়সে তাকে মানসিক আঘাতের (mental shock) ঔষধ দেওয়ার পরে তার শারীরিক কষ্টগুলো চলে যায় ।
যখন পিতা-মাতার মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়, তখন সন্তানদের মধ্যে তার অনেকগুলো ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়া পড়ে থাকে। তারা নিজেদেরকে পরিত্যাজ্য ভাবতে থাকে, তাদের হৃদয় ভেঙ্গে যায় এবং তারা নিজেদেরকে অপরাধী গণ্য করতে থাকে। এই ধরণের মানসিক আঘাত থেকে যে-কেউ এনোরেক্সিয়া নারভোসা (anorexia nervosa) রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, যাতে খাবার দেখলেই বমি আসতে থাকে। এই কারণে আমরা হোমিও ডাক্তাররা যখন কারো খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়মের সমস্যা দেখি, তখনই নিশ্চিত হয়ে যাই যে তার জীবনে কোন হার্টব্রেকের ঘটনা আছে। হোমিওপ্যাথিতে হার্টব্রেকের জন্য প্রায় ত্রিশটি ঔষধ আছে যার একেকটি একেক ধরনের হার্টব্রেকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে সেই ঔষধ থেকেই প্রকৃত বেনিফিট পাওয়া যায়, যা হার্টব্রেকের পাশাপাশি অন্যান্য আনুসঙ্গিক সমস্যাকেও কাভার করে। মূল কারণের প্রতিকার না করে এসব কিশোর-কিশোরীদেরকে (teenagers) হাসপাতাল-ক্লিনিকে তালাবদ্ধ করে রাখা, জোর করে খাবার খাওয়ানো এবং ইনজেকশান-অপারেশান ইত্যাদি করা হ্যানিম্যানের যুগের নিষ্টুরতার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এই কারণেই এসব মানসিক সমস্যা পুরোপুরি তার উৎসমূল থেকে না সারার কারণেই কয়েক বছর পরপর ঘুরে ফিরে বারে বারে পুণরায় দেখা দিয়ে থাকে (relapse), যা দেখে আমরা ভীষণ অবাক হই। যদিও মানসিক রোগী এবং তার আত্মীয়রা রোগমুক্তির আশায় আশায় দিন গুজরান করতে থাকেন, কিন্তু তাদের মন তো ভালো হয়ই না বরং এক সময় দেখা যায় তাদের শরীরও ভেঙ্গে পড়েছে ।
যে-সব হোমিও ঔষধ ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়, দেখা গেছে সে-সব হোমিও ঔষধ দিয়েই আবার পাগলামী (schizophrenia), বুদ্ধিপ্রতিবন্দ্বিত্ব (autism) ইত্যাদি মারাত্মক মারাত্মক মানসিক রোগ নিরাময় করা যায়। এজন্য হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা পাগলামী এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্দ্বিত্বকে অভিহিত করেছেন “মনের ক্যান্সার” (mental cancer) হিসেবে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মানসিক রোগের চিকিৎসায় দক্ষতা দেখাতে পারলেও তার সাথে সম্পর্কিত শারীরিক সমস্যাগুলোর কোন সমাধান করতে পারেন না। যেমন- বারে বারে ফিরে আসা চর্মরোগ, অদ্ভূত ধরনের এলার্জি, পাতলা চুল, বেশী বেশী লবণ খাওয়ার নেশা ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে একই ঔষধে মানসিক রোগের পাশাপাশি একই সাথে শারীরিক সমস্যাগুলোকেও সহজেই দূর করা যায়। জটিল রোগের ক্ষেত্রে যেই গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্নটি রোগীদের ডাক্তাররা করেন না, তা হলো “আপনার জীবনে কি ঘটেছিল যার পরে আপনি এই রোগে আক্রান্ত হলেন ? কোন ঘটনার মানসিক প্রভাবে এই রোগের সুচনা হলো ?”
একদিন একজন বুদ্ধিমতি মহিলা এলেন একজন বিখ্যাত হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীর কাছে তার মাসিক হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার চিকিৎসার জন্য। ভদ্রমহিলা বললেন, “এই সমস্যার জন্য একজন সত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের (gynecologist) নিকট গিয়েছিলাম। তিনি রক্ত পরীক্ষা করে বললেন- হরমোন লেবেল নেমে গেছে। তাই হরমোন ট্যাবলেট (hormone replacement therapy) খেতে হবে। আমি তাকে আমার জীবনের বিয়োগান্তক ঘটনার (tradgedy) কথা শোনাতে চাইলাম কিন্তু তিনি কোন আগ্রহ দেখালেন না”। ভদ্র মহিলা হরমোন চিকিৎসা নিতে অস্বীকার করে হোমিও চিকিৎসার জন্য আসলেন। হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানী তার স্বামীর পরকীয়া প্রেমের গল্প শুনে মানসিক শকের (mental shock) ঔষধ দিলেন। ফলে মহিলার মাসিকও পুণরায় শুরু হলো, তার হরমোন লেবেলও স্বাভাবিক হয়ে গেলো, তার মানসিক যন্ত্রণা দূর হয়ে মনে প্রশানিত নেমে এলো এবং সে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলার মতো আত্মবিশ্বাসও ফিরে পেলো। হ্যাঁ, এটি কোন অলৌকিক বা কাকতালীয় ঘটনা নয়। সত্যিকারের রোগমুক্তি তখনই অর্জন করা সম্ভব যখন ঘটনাহসমূহের যৌক্তিক ধারাবাহিকতাকে মুল্যায়ন করা যায়। সে হরমোন থেরাপি দিয়েও তার মাসিক চালু করতে পারত, যদিও তাতে পরবর্তীতে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় । তাছাড়া হরমোন থেরাপিতে তার ঋতুস্রাব চালু করা গেলেও তাতে মানসিক প্রশান্তি অর্জন করা যেতো না।
মানসিক রোগ হওয়ার পেছনে আরো যে-সব কারণ লুকিয়ে থাকে, তাদের মধ্যে আছে অপমানিত বা লাঞ্ছিত হওয়া (indignation/ humiliation)। এই অপমান মৌখিক (verbal) হতে পারে অথবা কারো আবেগকে (emotion) আঘাত করার মাধ্যমেও হতে পারে কিংবা যৌন নিযার্তন (sexual abuse) বা ধর্ষণের (rape) মাধ্যমেও হতে পারে। এসব ঘটনা মানুষের আত্মমযার্দাকে (dignity) আঘাত করে, তার আত্মবিশ্বাসে (self-confidence) ফাটল ধরিয়ে দেয়, তার ইচ্ছাশক্তিকে (willpower) অবদমিত করে থাকে এবং তার নিজের প্রতি নিজের মনে ঘৃণার সৃষ্টি করে। ইত্যাকার অপমানজনক ঘটনা থেকে অনেক শারীরিক রোগেরও সৃষ্টি হয়ে থাকে ; যেমন- মুত্রথলিতে প্রদাহ (interstitial cystitis), ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া (torticollis), চোখের অঞ্জনি (styes) ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনকি অপারেশনের দীর্ঘদিন পরেও সেখানে ব্যথা (/অপমান) থাকতে পারে ; কেননা আমাদের শরীরে যে-কোন ধরনের ছুরি-চাকু চালানোকে (surgical intervention) শরীর মহাশয় তার ওপর এক প্রকার ধর্ষণ হিসাবে গণ্য করে থাকেন। দুঃসংবাদ শ্রবন করা, কোন ব্যাপারে হতাশা, রাগ চেপে রাখা, দুঃখবোধ, হঠাৎ ভয় পাওয়া ইত্যাদি কারণেও অনেক বড় ধরনের শারীরিক-মানসিক রোগের সৃষ্টি হতে পারে ।
হোমিওপ্যাথির মুলনীতি হলো রোগীর শারীরিক লক্ষণের চাইতে মানসিক লক্ষণের গুরুত্ব বেশী দিয়ে ঔষধ প্রেসক্রাইব করা। হোমিওপ্যাথির মুলনীতিতে এবং হোমিও ঔষধের গুণাবলী বিশ্লেষণে মানসিক লক্ষণের এতোই ছড়াছড়ি দেখা যায় যে, যে-কোন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ তা অধ্যয়ণ করলে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাবেন। এবং তার মনে হতে পারে যে, হোমিওপ্যাথি বুঝি বা আদতেই একটি মানসিক রোগ বিজ্ঞান ! তাছাড়া হোমিও ঔষধের ব্যবহার বিধিও বেশ আরামদায়ক, মুখে খাওয়ালেই চলে। এমনকি যে-সব মানসিক রোগী ঔষধ খেতে অস্বীকার করে তাদেরকে পানি, দুধ, শরবত, চা, বিস্কিট, ভাত, মুড়ি বা অন্য খাবারের সাথে মিশিয়ে ঔষধ খাওয়াতে পারবেন; রোগী জানতেই পারবে না যে তাকে ঔষধ খাওয়ানো হচ্ছে। পত্রিকায় দেখেছিলাম, আমাদের মহল্লার একজন বয়ষ্ক হাজী সাহেব তার মানসিকরোগী পুত্রের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। তার মানসিক রোগী ছেলে পুলিশকে জানিয়েছে যে, তার পিতা অনেক বছর যাবত তাকে প্রতিদিন জোরপূর্বক (মাথা ঠান্ডা রাখার !) ইনজেকশান দিত ; এই কারণে সে তার পিতাকে হত্যা করেছে। পরিশেষে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের নিকট আমাদের অনুরোধ থাকবে, মানবিক বিবেচনায় তারা যেন সামান্য কষ্ট স্বীকার করে হোমিওপ্যাথি আয়ত্ব করে নেন এবং মানসিক রোগীদের চিকিৎসায় হোমিও ঔষধ প্রেসক্রাইব করেন। মানসিক রোগের ওপর আমাদের দেশে যে-সব কোর্স-কারিকুলাম আছে, তাতে অবশ্যই হোমিওপ্যাথিকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যদি কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ তার রোগীদের চিকিৎসায় হোমিও ঔষধ ব্যবহার করেন, তবে তিনি মানসিক রোগ নিরাময়ে এসব ঔষধের ক্ষমতা দেখে বিস্মিত হবেন এবং সুস্থ হওয়া রোগীদের মুখে কৃতজ্ঞতার হাসি দেখে নিজেকে ধন্য মনে করবেন ।
[ ভাল লাগলে পোস্টে অবশ্যই কমেন্ট বা শেয়ার করুন , শেয়ার বা কমেন্ট দিলে আমাদের কোনো লাভ অথবা আমরা কোনো টাকা পয়সা পাই না, কিন্তু উৎসাহ পাই, তাই অবশ্যই শেয়ার করুন । ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন