হলদে কলমি
আমাদের পুকুর, ডোবা বা জলাশয়গুলোতে কলমিলতা সহজদৃষ্ট এবং প্রায় সবার চেনা। সেই সঙ্গে কলমি ফুলও। এরা জলকলমি নামেও পরিচিত। শাক হিসেবেও কলমি বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন। ছবির ফুলটিও কলমি জাতেরই (Ipomea spp.) ফুল। তবে আমাদের দেশে ততটা সহজলভ্য নয়।
গত বছরের এপ্রিল মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রামের ইকবাল আহমেদ খান ভারত সীমান্তঘেঁষা মুগরা ইউনিয়নের নুনাসার গ্রাম থেকে মাটি নিয়ে আসেন তাঁর পুকুরপাড় বাঁধানোর জন্য। মাটি ফেলার দিন কয়েক পর নতুন মাটিতেই কয়েকটি চারা জন্মে। ইকবাল আহমেদ চারাগুলো নষ্ট না করে বাড়তে দেন, যত্ন-আত্তি করেন। গত মার্চ মাসে সেই লতানো গাছজুড়েই ফুল ফুটেছে। ফুলগুলোর নান্দনিক শোভা উপভোগ করতে সেই বাড়িতে প্রায় প্রতিদিনই আসছে আশপাশের লোকজন। তারা এ ফুলের নাম দিয়েছে হাজারি ফুল।
ইকবাল আহমেদ জানান, যে গ্রাম থেকে মাটি সংগ্রহ করা হয়েছে, তার পাশেই আছে একটি খরস্রোতা নদী। ধারণা করা হয়, এই বীজগুলো নদীর মাধ্যমেই পলিবাহিত হয়ে ভারতের কোনো এলাকা থেকে এখানে এসেছে। অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা জানিয়েছেন, এগুলো কলমি জাতের ফুল। আমাদের দেশে এদের ঘনিষ্ঠ প্রজাতি ঢোলকলমি, ভঁইকুমড়া, ছাগলখুরী ও মর্নিং গ্লোরি। বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে এ ধরনের আরও কিছু ফুল। আবার এসবের মধ্যে রকমফেরও আছে। সবকিছু মিলিয়ে তালিকা মোটামুটি দীর্ঘ। কিন্তু সারা পৃথিবীতে আইপোমিয়া গণে প্রায় ৫০০ প্রজাতির গাছ দেখা যায়। সেই তুলনায় অবশ্য আমাদের তালিকাটি সংক্ষিপ্ত।
বর্তমানে নতুন নতুন আবাদিত জাত এ সংখ্যাকে আরও সমৃদ্ধ করছে। এদের অধিকাংশই মর্নিং গ্লোরি নামে পরিচিত। বর্ণবৈচিত্র্যের কারণে সাধারণত বাগানের শোভা বৃদ্ধির জন্যই এর চাষ করা হয়।
লতা মাটিতে গড়ায়। দ্রুত বর্ধনশীল ও লম্বাটে হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পাতা কালচে সবুজ, একক, পুরু, কিনারা গভীরভাবে বিভক্ত, রোমশ, দুই মিলিমিটার লম্বা। ফুল সাধারণত একক, ফোটে পাতার কক্ষে, হলুদ-সোনালি রঙের, ফানেল বা ভেরি আকৃতির, গন্ধহীন, ৩ থেকে ১৬ সেন্টিমিটার দীর্ঘ। প্রস্ফুটনকাল ফাল্গুন-চৈত্র। একসঙ্গে অসংখ্য ফুলের সোনালি আলোয় বর্ণের যে প্রাচুর্য ফুটে ওঠে, তার সৌন্দর্য সত্যিই উপভোগ্য।
Leave a comment
You must be logged in to post a comment.