শিয়ালকাঁটা
শিয়ালকাঁটা (বৈজ্ঞানিক নাম Argemone mexicana) একটি কাঁটাযুক্ত পপি জাতীয় (প্যাপাভারেসি গোত্রের) গাছ যা মেক্সিকো থেকে বাকি বিশ্বে একটি আগাছা হিসাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম (আর্জিমোন মেক্সিকানা) প্রাচীন গ্রিক ভাষার আর্জিমা (“ছানি” বা “ক্যাটারাক্ট”) থেকে এসেছে। এই গাছের রস চক্ষুরোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হত বলে এর নাম দেওয়া হয়েছে আর্জিমোন, এবং মেক্সিকোয় পাওয়া যায় বলে মেক্সিকানা। এটি একাধারে বিষাক্ত আগাছা এবং ওষধি গুল্ম।
বাংলায় নামঃ শিয়ালকাঁটা
বৈজ্ঞানিক নামঃ Argemone mexicana
বিষাক্ত অংশঃ বীজ, গাছের কষ
বিষক্রিয়ার ধরনঃ বীজ মারাত্মক শোথ, বমন ও উদারাময় সৃজক এবং এর কষ উপদাহক।
শিয়ালকাঁটার বীজ দেখতে অনেকটা কালো জিরার মত দেখতে এবং সেই বীজের তেল দেখতে অনেকটা সর্ষের তেলের মত, তাই সর্ষের মধ্যে এর ভেজাল ব্যবহার হয়। খাদ্যতেলের শেয়ালকাঁটার তেলের ভেজালের মাত্রা ১%এর বেশি হলে বিষক্রিয়া দেখা যেতে পারে। ১৯৭৭ সালে কলকাতায় একবার এর বিষক্রিয়ার প্রাদুর্ভাব হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে উত্তর ভারতে দিল্লীর আশেপাশে প্রায় আড়াই হাজার লোকের মধ্যে খাদ্যতেলের মধ্যে ভেজালের কারণে একবার এই বিষক্রিয়া দেখা দেয় এবং অন্ততঃ ৬৫ জন মারা যায়। এই বিষক্রিয়ার লক্ষণ শরীরে জল জমে যাওয়া (ড্রপ্সি) তাই এই অবস্থার নাম “এপিডেমিক ড্রপ্সি”। শিয়ালকাঁটার তেলের মধ্যে অবস্থিত বিষাক্ত উপক্ষারগুলির মধ্যে দুটি হল স্যাঙ্গুইনারিন (Sanguinarine) ও ডাইহাইড্রোস্যাঙ্গুইনারিন (dihydrosanguinarine)। স্যাঙ্গুইনারিন সঠিক কিভাবে কাজ করে তা সম্পূর্ণ পরিষ্কার না হলেও এই উপক্ষার অনেকটা ডিজিটালিস বা ওউয়াবেন-এর মত কোষপর্দায় অবস্থিত সোডিয়াম-পটাসিয়াম-এটিপিএজ পাম্পকে বন্ধ করে দেয়। এই ক্রিয়া স্বল্প মাত্রায় হলে কোষে ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় ফলে হৃদযন্ত্রের সংকোচন বাড়িয়া এটি ডিজিটালিসের মত ড্রপ্সির ওষুধ হিসাবে কাজ করতে পারে। এই জন্যে এই গাছটির ওষধি গাছ হিসাবে ব্যবহার ছিল। কিন্তু এর মাত্রা বেশি হলে রক্তবাহের দেওয়ালের ছিদ্রগুলি বড় হয়ে রক্তরস বেশি পরিমাণে আন্তঃকোষীয় স্থানে বের হয়ে যায় ও এটি নিজেই ড্রপ্সির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
Leave a comment
You must be logged in to post a comment.