অর্জুন
স্থানীয় নাম : অর্জুন
ভেষজ নাম : Terminalia arjuna
ফ্যামিলি:- Combretaceae.
ব্যবহার্য অংশ : গাছের ছাল, মূল, কান্ড, পাতা, ফল, ফূল ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
রোপনের সময় : বর্ষাকাল
উত্তোলনের সময় : সারা বছর সংগ্রহ করা যায়।
আবাদী/অনাবাদী/বনজ : আবাদী, অনাবাদী বনজ সব ধরনের হয়ে থাকে।
চাষের ধরণ : বীজ ও কলম থেকে গাছ উৎপন্ন হয়
উদ্ভিদের ধরণ: বড় বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ।
বৃক্ষ পরিচিতি
বৃহৎ গাছ; ৫০/৬০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়, পাতাগুলির আকারটা একটু বড় হলেও মানুষের জিভের মত কিন’ পাতার ধারগুলি খুব সরু দাঁত করাতের মত কিন’ মাংসল নয়, শক্ত গাছটির বোটনিক্যাল্ নাম Terminalia arjuna.ফ্যামিলি- Combretaceae. সমগ্র উপমহাদেশে কম-বেশী। এ গাছ দেখা যায়।
ব্যবহার্য অংশ- গাছ বা মূলের (ত্বক) পাতা ও ফল।
অর্জুন গাছের ছাল সংগ্রহ করতে পূর্বের দিকের ছালটা নিতে হয়; কারণ পূর্বের দিকের বায়ুর তরলত্ব বেশী, ওদিকের ছালটা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াকারিত্বেও অনুকূল। সকালের রৌদ্র ও সেদিককার ছালটায় রঞ্জনরশ্মি বেশী সমৃদ্ধ হয়,
প্রয়োগ ক্ষেত্র
(১) যাঁদের বুক ধড়ফড় করে অথচ হাই ব্লাডপ্রেসার নেই, তাঁদের পক্ষে অর্জুন ছাল কাঁচা হলে ১০/১২ গ্রাম অথবা শুষ্ক হলে ৫/৬ গ্রাম একটু থেতো করে, আধ পোয়া দুধ আর আধসের জল একসঙ্গে সিদ্ধ করে, আন্দাজ আধ পোয়া থাকতে নামিয়ে, ছে’কে বিকেলের দিকে খেতে হয়। তবে গরম অবস্থায় ঐ সিদ্ধ দুধটা ছে’কে রাখা ভাল। এর দ্বারা বুক ধড়ফড়ানি নিশ্চয়ই কমবে। তবে পেটে বায়ু না হয় সে দিকটাও লক্ষ্য রাখতে হয়।
লো- ব্লাড্প্রেসারে- উপরিউক্ত পদ্ধতিতে তৈরী করে খেলে প্রেসার স্বাভাবিক হয়।
(২) রক্তপিত্তে- মাঝে মাঝে কারণ বা অকারণে রক্ত ওঠে বা পড়ে; সে ক্ষেত্রে ৪/৫ গ্রাম ছাল রাত্রিতে জলে ভিজিয়ে রেখে ওটা সকালে ছেকে নিয়ে জলটা খেতে হয়।
(৩) শ্বেত বা রক্তপ্রদরে- উপরিউক্ত মাত্রা মত ছাল ভিজানো জল আধ চামচ আন্দাজ কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে খেলে উপশম হয়।
(৪) ক্ষয় কালে- অর্জুন ছালের গুড়ো, বাসক পাতার রসে ভিজিয়ে, সেটা শুকিয়ে (অন্ততঃ সাত বার) নিয়ে রাখতেন প্রাচীন বৈদ্যেরা। দমকা কাসি হতে থাকলে একটু ঘৃত ও মধু বা মিছিরির গুড়ো মিশিয়ে চাটতে দিতেন।
(৫) শুক্রমেহে(Spermatorrhoea)- অর্জুন ছালের গুড়ো ৪/৫ গ্রাম আধ পোয়া আন্দাজ গরম জলে ৪/৫ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ছেঁকে ঐ জলে আন্দাজ ১ চামচ শ্বেতচন্দন ঘষা মিশিয়ে খেলে উপকার হয়।
(৬) যাঁদের প্রস্রাবের সঙ্গে Puscell বা পুঁজ বেশী যায়, তাঁরা ৩/৪ গ্রাম শুকনো অর্জুন ছাল আধ পোয়া আন্দাজ গরম জলে ৪/৫ ঘন্টা ভিজিয়ে পরে ছেকে তার সঙ্গে একটু রান্না করা বার্লি মিশিয়ে খেলে ওটা চলে যাবে।
(৭) রক্ত আমাশয়ে- ৪/৫ গ্রাম অর্জুন ছালের কাথে ছাগল দুধ মিশিয়ে খেলে ওটা সেরে যায়।
উল্লেখ্য যে, অর্জুন গাছের সব অংশই কষায় রস (Astringent); এর জন্যই ওর কাথে অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। ওদিকটা ও লক্ষ্য রাখা দরকার। তবে এটা দেখা যায় দুধে সিদ্ধ অর্জুন ছালের ব্যবহারে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না।
বাহ্য প্রয়োগ
(৯) মচ্কে গেলে বা হাড়ে চিড় খেলে- অর্জুন ছাল ও রসুন বেটে অল্প গরম করে ওখানে লাগিয়ে বেঁধে রাখলে ওটা সেরে যায়; তবে সেই সঙ্গে অর্জুন ছালের চূর্ণ ২/৩ গ্রাম মাত্রায় আধ চামচ ঘি ও সিকি কাপ আন্দাজ দুধ মিশিয়ে অথবা শুধু দুধ মিশিয়ে খেলে আরও ভাল হয়।
(১০) মেচেতায় – অর্জুন ছালের মিহি গুড়ো মধুর সঙ্গে মিশিয়ে লাগালেও দাগগুলি চলে যায়।
(১১) হার্ণিয়া হলে- অর্জুনের ফল কোমরে বেঁধে রাখলে উপকার পাওয়া যায়।
(১২) পুঁজস্রাবী ঘা (ক্ষত)- অর্জুন ছালের কাথে ধুয়ে, ঐ ছালেরই মিহি গুঁড়ো ঐ ঘায়ে ছড়িয়ে দিলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
(১৩) ফোড়া- অর্জুনের পাতা দিয়ে ঢাকা দিলে ওটা ফেটে যায়, তারপর ঐ পাতার রস দিলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
(১৪) হাঁপানীতে (Cardiac) অর্জুনের ফলের শুষ্ক টুকরো কলকে করে তামাকের মত ধোঁয়া টানলে হাঁপের টান কমে যায়।
Leave a comment
You must be logged in to post a comment.