আলকুশী
আলকুশী নামটাই যেন একটা বর্ণিল ফুলের আভাস দেয়। তাই দেখার ইচ্ছাটাও অনেক দিনের। এই নামটার সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত নয়।
কিন্তু এর আরো কয়েকটা নাম আছে যার সাথে আমরা কমবেশী পরিচিত, যেমন বিচুটি বা বিলাইআচরা। একে খামাচ নামেও ডাকা হয় কোথাও কোথাও।
সংস্কৃতে এই গাছের নাম আত্মগুপ্তা, কপিকচ্ছু। ইংরেজিতে বলে Common Cowitch, Cowhage, Velvet Bean plant।
বৈঙ্গানিক নাম Mucuna pruriens (Linn.) DC., Mukuna prurita Hook. এটি Papilionaceae ফ্যমিলির উদ্ভিদ। পাওয়া যায় আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গায়ই, বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায়।
তবে বাড়ির আশেপাশের জংগল বা আগাছা পরিস্কারের ফলে এখন আমাদের আশেপাশে, এমনকি গ্রামেও এখন এ গাছ কম দেখতে পাওয়া যায়।
আমার প্রতিদিনের পায়েহাটা পথেরধারের এক বাড়িতে কয়েকদিন আগে দেখতে পাই এক সিম জাতিয় গাছ, কিন্তু ফল দেখতে অন্যরকম। দেখেই মনে পড়ে যায় আলকুশীর কথা। দুদিন পর যাই ছবি তুলতে।
ছবি তুলতে গিয়ে হাতে সামান্য লেগে যায় একটি ফল। ফলশ্রুতিতে ঘন্টাখানেক মনোযোগের সাথে চুলকাতে থাকি! বুঝতে পারি, কেন একে বিলাইআচরা বলে।
আলকুশী বর্ষজীবী লতা। দেখতে সিম গাছের মত।
গাছের লতা, পাতা ছোট ছোট লোমে আবৃত।
পাতা ট্রইফোলিয়েট বা ত্রিপত্রবিশিষ্ট। ফুল বেগুনী বর্ণের। ফল পড বা শুঁটি প্রকৃতির, কিছুটা বাকা, ধূসরবর্ণের। একটি ফলে ৫ থকে ৬ টি চেপ্টা, পীতবর্ণের বীজ থাকে।
প্রায় সারা বছরই ফুল ও ফল হয়। গাছের ফল বা পাতা চামড়ায় লাগলে প্রচন্ড চুলকায় এবং ফুলে ওঠে।
গাছটির আছে বিভিন্ন ঔষধি গুণ।
মূলত এর শিকড় বিরেচক, জ্বরের প্রলাপে এবং মধুর সাথে মিশিয়ে কলেরায় ব্যবহৃত হয়। স্নায়বিক দূর্বলতায় এবং বিছা বা কাঁকড়ার কামড়ে বীজ ব্যবহৃত হয়। ফলের লোম কৃমিনাশক।
আলকুশি একটি গুল্ম জাতীয় গাছ। এটি শিম পরিবারের একটি উদ্ভিদ। ফল অনেকটা শিমের মতো, ৪ থেকে ৬ টা বীজ থাকে। শুকনো ১০০টি বীজের ওজন হচ্ছে ৫৫-৮৫ গ্রাম। এবং বীজগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোম দ্বারা আবৃত থাকে যা সহজেই পৃথক হয়ে যায়। এগুলি ত্বকের সংস্পর্শে এলে প্রচণ্ড চুলকানি সৃষ্টি করে। বানরের সঙ্গে এদের সম্পর্ক হল, যখন আলকুশি ফল পুষ্ট হতে থাকে তখন চুল্কানির ভয়ে বানরের দল ঐ এলাকা ছেড়ে চলে যায়, কারণ এর হুল বাতাসেও ছড়িয়ে পড়ে। বানরেরা ফিরে আসে যখন মাটিতে ফল পড়ে যায়। সেগুলো তারা খায় বিশেষ দৈহিক কারণে। কিছু আলকুশি আছে যার রোম নেই বললেই চলে সেটা কাকাণ্ডোল, Mucuna pruriens var. utilis নামি পরিচিত।
বোটানিক্যাল নামের Pruriens শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ভাষা থেকে, যার অর্থ চুলকানির অনুভূতি। ফলের খোসা ও পাতায় আছে- সেরাটোনিন, যার কারণে চুলকানির উদ্রেক হয়। মধ্য আমেরিকায় আলকুশির বীচি আগুনে ভেজে চূর্ণ করা হয় কফির বিকল্প হিসেবে। এ কারণে ব্রাজিলসহ অন্যান্য দেশে এর প্রচলিত নাম হচ্ছে নেস ক্যাফে। গুয়েতেমালায় কেচি সম্প্রদায়ের মানুষ এখনও খাদ্যশস্য হিসেবে এটি আবাদ করে। সবজি হিসেবে রান্না হয়।
Leave a comment
You must be logged in to post a comment.