স্বর্ণলতা
স্বর্নলতা একটি পরজীবী উদ্ভিদ। কোন পাতা নেই, লতাই এর দেহ কান্ড মূল সব। লতা হতেই বংশ বিস্তার করে। সোনালী রং এর চিকন লতার মত বলে এইরূপ নামকরন। ঔষধি গুন আছে। অনেক ক্ষেত্রি আশ্রয় দাতা গাছের মৃত্যু ঘটিয়ে থাকে। স্বর্ণলতা লতা জাতীয় বহুর্ষজীবি উদ্ভিত। অন্য উদ্ভিদের গায়েই এর বসবাস। জীবন-ধারণের জন্যও নির্ভর করতে হয় অন্য উদ্ভিদের ওপর। বাংলার প্রায় সর্বোত্র এদের দেখা মেলে। সারা বছরই দেখা যায়। তবে গ্রীষ্ম কালে এদের সৌন্দর্য্যরে শতভাগ প্রস্ফুটন ঘটে।
বাংলায় নামঃ স্বর্ণলতা ,আলোক লতা বা আলোকলতার।
বৈজ্ঞানিক নামঃ Cuscuta reflexa
বিষাক্ত অংশঃ পুরো উদ্ভিদ
বিষক্রিয়ার ধরনঃ প্রজনন ক্ষমতারোধি, বমন সৃজক, গর্ভপাতক।
স্বর্ণলতা আর দশটা পরজীবি উদ্ভিদের চেয়ে আলাদা। আলাদা আর দশটা লতার চেয়েও। স্বর্ণলতার পাতা-ফল হয় না। তবে শাখা প্রশাখা গজায় অবিশ্বাস্য দ্রুততায় অবিশ্বাস্য সংখ্যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বর্ণলতা রং সোনালি। লতা বা শাখা-প্রশাখা অত্যান্ত নরম ও রসালো। মসৃণ। খুবই চিকন। লতার বেড় ২-৩ মিলিটার হয় মাত্র।আগেই বলেছি, স্বর্ণলতায় ফল পাতা হয় না। তবে ফুল হয়। লতার গায়ে ২-৩ ইঞ্চি দূরে দূরে গিঁট থাকে। সেই গিঁট থেকে স্বর্ণলতার ফুল বের হয়। খুব ছোট ছোট। কলসাকৃতির।
ফুলের রং সাদা, কলসের মাঝখানে হলুদ রঙের কিশোর থাকে। স্বর্ণলতার ফল বা বীজ হয় না তাই এদের বংশবৃদ্ধি ঘটে অঙ্গজ প্রজননের মাধ্যমে। আমার কাছে পাথরকুচি আর লজ্জাবতীর মত স্বর্ণলতাও আশ্চর্য উদ্ভিদ। সেটা এর বংশবিস্তার পদ্ধতির কারণেই। কোনো গাছের মাথা থেকে স্বর্ণলতার একটু অংশ ছিঁড়ে অন্য কোনো গাছের মাথায় ফেলে দিলেই কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেই গাছের জেঁকে বসে স্বর্ণলতা।
সাধারণত রাখাল আর শিশু-কিশোরদের মাধ্যমেই স্বর্ণলতার বংশ বিস্তার ছড়িয়ে পড়ে দূর দূরান্তে। এক গাছ থেকে স্বর্ণলতা ছিঁড়ে ছড়িয়ে দেয় দূর-দূরান্তের কোনো ঝোপ কিংবা গাছের ওপর। ওরা এটাকে মজার খেলা হিসেবেই নেয়। ছোটবেলায় আমিও খেলেছি এই মজার খেলা।
ঠিক শিকড় বলতে যা বোঝায় স্বর্ণলতার তেমন শিকড় থাকে না। তবে এক গাছ থেকে আরেক গাছে ফেলার পর এর গায়ে একধরনের তন্তু গজায়। সেই তন্তুই আঠার মত গেথে দেয় আক্রান্ত গাছের গায়ে। স্বর্ণলতা যে গাছের মাথায় নিজের আধিপত্য বিস্তার করে সেই গাছের ওপরই খাদ্যনির্ভর হয়ে বেঁচে থাকে। পোষক গাছ থেকে রস শোষণ করে জীবন ধারণ করে। স্বররণলতার খাদ্য যোগাতে গিয়ে ধীওে ধীওে মৃত্যুর পথে এগিয়ে যায় আক্রান্ত গাছ। আশ্রয়দাতাকে তীলে তীলে শেষ কওে দেয় বলে এর ইংরেজি নাম Devis Hair বা শয়তানের চুল।
Leave a comment
You must be logged in to post a comment.