ধুতরা
বাংলায় নামঃ ধুতরা।
বৈজ্ঞানিক নামঃ Dutura metel
ফ্যামিলি: Solanaceae
ব্যবহার্য অংশ : মূল, কান্ড, পাতা, ফল, ফূল ঔষধে ব্যবহৃত হয়।
বিষাক্ত অংশঃ সমস্ত উদ্ভিদ
বিষক্রিয়ার ধরনঃ চেতনানাশক, প্রলাপসৃজক।
রোপনের সময় : বর্ষাকাল
উত্তোলনের সময় : বর্ষাকালে ঘন্টার আকারে সাদা ফুল হয়। বর্ষার শেষে ফল পাকে।
আবাদী/অনাবাদী/বনজ : আবাদী, অনাবাদী বনজ সব ধরনের হয়ে থাকে।
চাষের ধরণ : বীজ থেকে গাছ উৎপন্ন হয়
উদ্ভিদের ধরণ: গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ
পরিচিতিঃ- সর্বজন পরিচিত এই ধুতরা অযত্নসম্ভুত গুল্ম; উপমহাদেশের প্রায় সকল স্থানেই দেখা যায়। এক একটা গাছ ৪/৫ বৎসরও বেঁচে থাকে। সাদা ফুলের গাছই যত্রতত্র দেখা যায়; বর্ষাকালে ঘন্টার আকারে সাদা ফুল হয়, তাই তার এক নাম ‘ঘন্টাপুষ্প’। লাড়ুর মত গোল ফলের চারিদিকে ছোট ছোট কাঁটা আছে, তাই এই গাছের আর একটি পর্যায় শব্দনাম ‘কন্টফল’। গাছ, ফল, পাতা সবই সবুজ রং- এর; কোন পশুপক্ষ এর পাতা বা ফুল খায় না, ফলের মধ্যে গুচ্ছাকারে বহু সাদা বীজ হয়, এর ফল পাকলে ফেটে যায়, তখন ঐ বীজের রং পাংশুটে (ছাই) রং এর হয়। দ্বিতীয়টি কৃষ্ণধূস্তুর, যাকে আমরা বর্তমানে কনক ধুতরা বলি, তার পাতার শিরা, বোটা, গাছের ও ফুলেল রং গাঢ় বেগুনে রং-এর বৃন্তে একটি ফুলও হয়, আবার একটি বৃন্তে অন্তপ্রবিষ্ট দুটি বা তিনটি ফুলও হয়, মনে হয় যে একটির মধ্যে আর একটি গুঁজে দেওয়া। এরা প্রজাতিতে কিন্তু একই। এর বোটানিক্যাল নাম : Datura metel Linn. ফ্যামিলি:- Solanaceae
আর এক প্রকার ধুতরা গাছ বিহারের অঞ্চল বিশেষে এবং উত্তরবঙ্গে দেখা যায়। এগুলি ৬/৭ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়, তার পাতাগুলি দেখতে অনেকটা বাসক পাতার মত, ফুলগুলি অপেক্ষাকৃত লম্বা, কুচবিহার অঞ্চলে একে বলে গজঘন্টা ধুতরা। বিহার প্রদেশের বৈদ্যগণের মতে এটি রাজধূস্তুর।
ঔষধি গুনাগুন :
১। উন্মত্ত কুকুর ও শৃগালে কামড়ালে- ধূতরার মুল কাঁচা ১ ১/২ গ্রাম (দেড় গ্রাম) পূনর্নবার (Boerhaavia repens) কাঁচা মুল ৫ গ্রাম একসঙ্গে বেটে শীতল দুগ্ধ বা জলের সাথে পান করাতে বলা হয়েছে ।
২। উন্মাদে- ধুতরার মুলের খুব সরু যে শিকড় (মুল শিকড় বাদ) কাঁচা ১ গ্রাম (৭/৮ রতি) শিলে বেটে সেটা আধসের জলে গুলে সেই জলে ৫০ গ্রাম আন্দাজ পুরানো চাল দুধ আধ সের ও মাত্রা মত চিনি বা মিছরি দিয়ে পায়েস করে এইটা সকালে এবং বিকালে খাওয়াতে হবে। তবে রোগীর বলাবল, ক্ষেত্র, বয়স এসব বিচার করে রোগীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা উচিত।
বিশেষ সতর্কতাঃ- বিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ভিন্ন জনসাধারণের পক্ষে এটি ব্যবহার করা উচিত হবে না। ধুতরা গাছের কোন অংশের আভ্যন্তরিক প্রয়োগে (Intrernal Application) বিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এর সঙ্গে আর একট্ কথা জানা দরকার, পুর্বে বৈদ্যগণ বিশেষ ঔষধিগুলি নিজেরা করতেন। তাঁরা এই ধুতরার শিকড় তোলার সময় গাছের উত্তরদিকের শিকড় তুলে নিতেন, তাঁদের বক্তব্য হলো- এই উত্তরদিকের শিকড় সোমগুণ প্রভাব বেশী পায় বলে তার বায়ু দমনের শক্তি সমধিক হয়, তাই তার নিদ্রাকর্ষণ করার শক্তি বেশী।
৩। গরলবিষে- ধুতরার মূল, কাঁচা হলুদ, শিরীষ ফুল (Albizzia lebbeck Benth)একসঙ্গে বেটে লাগালে গরল বিষ দূর হয়।
পাতার ব্যবহারঃ-
৪। টাক রোগে (বিক্ষিপ্ত টাকে) – যেটা বৈদ্যকের দৃষ্টিতে ইন্দ্রলুপ্ত রোগ, সাধারণ লোকের ধারণা, এটা তেলাপোকায় কেটে দিয়েছে; তা নয়, এটা একপ্রকার Fungus infection । একবার গায়ের কোন জায়গায় বসলে তাকে তাড়ানো মুশকিল। এ ক্ষেত্রে ধুতরা পাতার রস মাথায় যেখানে হয়েছে সেখানে লাগাতে হবে। তবে অনকে সময় দেখা যায় প্রায় সমগ্র মাথায় এই রোগ ব্যপ্ত হয়ে পড়েছে, সেক্ষেত্রে পাতার রস আজ এধার ও কাল ওধার করে লাগাতে হয়; দিনে একবারের বেশী লাগানো উচিত নয়, আর এক দিন বাদ এক দিন লাগালেই ভাল। পাশ্চাত্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই রোগের নাম দেওয়া হয়েছে Alophecia areata. যদি দেখা যায় যে, মাথায় একটা যন্ত্রাণা অনুভব করছেন, তা হলে এটা ব্যবহার করা সমীচীন হবে না।
৫। ক্রিমিতে- পাতার রস ২/৩ ফোঁটা করে দুধের সঙ্গে খাওয়াতে হবে ।
৬। স্তনের ব্যথায়ঃ- ধুতরার পাতার রস করে তাকে জ্বাল দিয়ে ঘন করে (মধুর মত) তুলি করে লাগাতে হয়, এর দ্বারা ব্যথা ও ফুলো দুয়েরই উপশম হয়। আর যদি এর সঙ্গে একটু আফিং মুসব্বর মিশিয়ে লাগানো যায় তবে আর ফলপ্রদ হয়।
৮। ফিক ব্যথায়ঃ- সে ঘাড়ে বা পিঠে যে কোন জায়গায় হোক না কেন ধুতরার পাতা ও চুণ এক সঙ্গে রগড়ে রস বের করে সেই রসটা লাগালে ঐ ব্যথা কমে যায়; অন্ততঃ ৩ বার ৪/৫ ঘন্ট অন্তর লাগাতে হয়।
৯। সাদা আমাশায়ঃ- কাল ধুতরার শুস্ক পাতা ও ফুল বাসক পাতায় বেঁধে চুরুট তৈরী করে সেই চুরুটের ধোয়া টানলে হাঁপের টান কমে যায় বটে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সর্দিটা টেনে যায়। বাসকপাতা বা ফুল ভেঙ্গে বিড়ির তামাকের মত করে নিতে হয়- তার মাত্রা হবে ৩ রতি থেকে ৬ রতি পর্যন্ত।
বৈদ্যবাড়ীর ‘কনক তৈল’
প্রস্তুত বিধি সরষের তেল ১ কেজি, ধুতরোর পাতা ডাটা সমেত কুটে, নিংড়ে রস নিতে হবে ২ কেজি বা লিটার আর ঐ শুধু পাতা বেটে আন্দাজ ১০০ গ্রাম। তেলটা আগুনে চড়িয়ে নিস্ফেন হয়ে ধোঁয়া উঠতে থাকলে, তেলটা নামিয়ে একটু ঠান্ডা হলে ঐ রসটা এবং ঐ পাতা বাটা অল্প অল্প করে দিতে হবে। ১০/১৫ মিনিট পরে আন্দাজ ২ সের জল দিয়ে পাক করতে হবে, জলটা মরে গেলে, ঐ তেলটাকে ছেকে নিতে হবে।
১১। পাদদারী রোগেঃ- যাঁদের পায়ের তলা ফেটে ফেটে যায়, তাকেই পাদদারী রোগ বলে। এ ক্ষেত্রে উপরিউক্ত কনক তৈল বিশেষ উপকারী।
১২। ছুলিতেঃ- এই কলক তৈল লাগালেও কাজ হয়।
১৩। কানের যন্ত্রণায়ঃ- ঊর্ধ্বগ শ্লেষ্মার দোষে কানে বা কপালে যন্ত্রণা হয়, সে ক্ষেত্রে কানে তেলের ফোঁটা দেওয়া যায় আর কপালের যন্র্েণায় একটু তেল কপালে মালিশ করতে হয়।
১৪। শ্বাসেঃ- সমগ্র গাছকে অর্থাৎ গাছ, পাতা, মূল, ফল ও ফুলে সিদ্ধ করা অন্যান্য দ্রব্য সংযোগে জারন (Fermentation) করা হয়। এইটি কনকাসব নামে প্রচলিত।
১৫। বাতের ব্যথায়:- ধুতরা পাতার রসের সঙ্গে সরষের তৈল মিশিয়ে গরম করে মালিশ করলে কমে যায়।
১৬। ফোঁড়ায়:- ধুতরার পাতার রসের সঙ্গে সামান্য একটু গাওয়া ঘি মিশিয়ে প্রলেপ দিলে ফোঁড়া পেকে যায়।
সাবধানতাঃ- এই গাছটি খুবই বিষাক্ত, তাই সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। খুব আভিজ্ঞতা না থাকলে ব্যবহার না করাই উচিৎ।
Leave a comment
You must be logged in to post a comment.