লতা কস্তুরী
পাঠ্য পুস্তকের ভাষায় এই গাছের নাম লতা কস্তুরি হলেও স্থানীয় লোকজন একে কস্তুরি বলে থাকেন।
গাছের পরিচিতি
লতা কস্তুরি গাছটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর সারা গায়ে লোম বা শুং থাকে। গাছগুলো দেখতে অনেকটা ঢেঁড়স গাছের মতো। ৩-৪ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। পাতা বিভিন্ন আকারের, ৫-৭ ভাগে বিভক্ত থাকে। হলুদ রঙের ফুল এবং ঢেঁড়সের মতো ফলও হয়। তবে আকারে ছোট ও মোটা হয়ে থাকে। ফলের ভিতরে অনেক বীজ থাকে। এই গাছগুলো বিশেষ করে রাস্তার পাশে এবং স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় জন্মায়। কার্ত্তিক মাস হতে আরম্ভ করে বৈশাখ মাস পর্যন্ত এই গাছে ফুল ফোটে। নেত্রকোনা জেলার লক্ষ্মীগঞ্জের কান্দারপাড়ার বাসিন্দা মো. লাল মিয়ার তথ্যমতে, নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে এই ওষুধি গাছটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে:
ব্যবহার
লতা কস্তুরি গাছের ব্যবহৃত অংশ হলো বীজ। বিভিন্ন রোগে এর বীজ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয় যেমন-
১. ক্লান্তিতে-অনেকসময় একনাগারে বেশি পরিশ্রম বা কাজ করলে শরীরে ক্লান্তি আসে। এই ক্লান্তি ভাব দূর করতে হলে কস্তুরি গাছের ১০-১৫টি বীজ জল দিয়ে বেটে চিনি মিশিয়ে শরবতের মতো ২-৩ দিন খেলে শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর হয়।
২. পেট ফাঁপা- বদ হজমের কারণে কারো পেট ফেঁপে গেলে এর বীজ গুঁড়ো করে অল্প গরম জলে গুলে নিয়ে ২ চামচ পরিমাণ খেলে পেট ফাঁপা ভালো হয় এবং খাবারে রুচি হয়।
৩. মুখের বিভিন্ন অসুখে- দাঁতের গোড়া ফোলা, মুখে দুর্গন্ধ এবং জিহ্ব্ায় ঘা হওয়া, ঢোক গিলতে গলায় ব্যথা এ সবই মুখের ভেতরের বিভিন্ন রোগ। এ সব সমস্যা দূর করার জন্য লতা কস্তুরির বীজ আন্দাজ মতো নিয়ে থেঁতো করে, আধা কাপ গরম জলে কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ওই জল মুখে নিয়ে কিছুক্ষণ রাখতে হবে। তারপর কুলি করতে হবে। ৩-৪ দিন এরকম করলে মুখের উপরোক্ত রোগ ভালো হয়। আবার এই জল খেলেও উপকার পাওয়া যায়।
৪. চোখের অসুখে- চোখে অনেক রকমের অসুখ হয়। তবে সাধারণভাবে ঝাপসা দেখা, জল ঝরা, চোখ ফুলে যাওয়া, টনটন করা এসব রোগের বেলায় কস্তুরি বীজ অধিক কাজ দেয়। ২০-২৫টি বীজ জল দিয়ে বেটে, ৩-৪ চামচ জল দিয়ে গুলে সেই জল ছেঁকে নিয়ে একটা বোতলে ভরে রাখতে হবে। তারপর সেই জল দিনে দু’বার করে চোখে ফোঁটা ফোঁটা করে দিতে হবে। দু’দিন ব্যবহার করলেই চোখের এ সব রোগ ভালো হয়। এছাড়াও অনেকে এর ফল ঢেঁড়স এর মতো রান্না করে খায় বলে মো. লাল মিয় জানান।
বর্তমান অবস্থা
লতা কস্তুরি নামক ঔষধি গাছটি বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। এই গাছ অনেকে চেনে না এবং নামও জানে না। কদাচিৎ এই গাছের দেখা মিলে। এর ফল দিয়ে ছোট ছেলে মেয়েরা খেলা করে। না চেনা এবং ব্যবহার না জানার কারণে এই গাছের বীজ সংরক্ষণের অভাবে খেলার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
পরিশেষে
আমাদের দেশের জনসংখ্যার বিপুল অংশের অবস্থান দারিদ্র সীমার নিচে এবং দেশের শতকরা ষাট ভাগ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। এই মানুষগুলোর একমাত্র ভরসা এবং বিশ্বাসের জায়গা হলো এ সমস্ত ঔষধি গাছ। এ ক্ষেত্রে সামান্য সচেতনতা আর গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক সম্ভারের পথ ও পদ্ধতি জানা থাকলে কিংবা জানানোর ব্যবস্থা করলে বেশির ভাগ দরিদ্র মানুষই বিনা খরচে রোগব্যাধির চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে এবং সুস্থ থাকতে পারে।
Leave a comment
You must be logged in to post a comment.