অশ্বগন্ধা
অশ্বগন্ধা আমাদের দেশের ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম। গাছের গন্ধ ঘোড়া বা অশ্ব এর মত বলেই সংস্কৃতে একে অশ্বগন্ধা বলে। বাংলায় ও আমার অশ্বগন্ধা-ই বলে থাকি। শক্তিবর্ধক হিসেবে এবং এ্যাফ্রোডেসিয়াক হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলেই ইংরেজিতে একে Indian Ginseng বলে। Solanaceae ফ্যামিলির গাছ অশ্বগন্ধার বৈঙ্গানিক নাম Withania somnifera (L.) Dunal. Withanine নামক রাসায়নিক উপাদান এই গাছ থেকে আলাদা করার কারণে এই গাছের নামে Withania নামকরণ করা হয়েছে। আর somnifera এসেছে somnifer থেকে যার মানে নিদ্রা আনয়নকারী। মূল এবং পাতা স্নায়ুর বিভিন্ন রোগে ব্যবহৃত হয়।( হোমিওপ্যাথি ঔষধ অশ্বগন্ধা – Ashwagandha )
এ গাছ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকায় পাওয়া যায়। নিদ্রা আনয়নকারী ঔষধ হিসেবে প্রচীন মেসোপটেমিয়া এবং মিশরে এর ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়।
অশ্বগন্ধা একটি ছোট গাছ। এটি দুই-আড়াই হাত উঁচু হয়। গাছটি শাখাবহুল। এতে ছোট ছোট মটরের মতো ফল হয়। ওষুধার্থে এর মূল ব্যবহার্য। ভেষজটির নাম একটি প্রাণীর বোধক। আবার তার ক্রিয়াশক্তিরও বোধক। অশ্বের একটি বিশেষ অঙ্গ (লিঙ্গ)। এই ভেষজটির মূলের আকৃতিও অশ্বের লিঙ্গের মতো। আবার এর গাছ-পাতা সিদ্ধ করলে এমন একটা উৎকট গন্ধ বের হয়, যার গন্ধ ঠিক অশ্বমূত্রের গন্ধের মতো। অপরদিকে ক্রিয়াকারিত্বের দিক থেকে অশ্বের যেরকম যৌনক্রিয়ায় অদম্য শক্তি, এই ভেষজটিও মানবদেহে এনে দিয়ে থাকে অশ্বের মতো চলৎশক্তি_ কি কর্মশক্তিতে আর কি ইন্দ্রিয়বৃত্তি চরিতার্থের সামর্থ্যে। এখানে তার বীর্যশক্তি অশ্বের মতো, কন্দ অশ্বের মতো এবং গাছ-পাতা সিদ্ধ গন্ধ অশ্বের মূত্রের মতো হওয়ায় এর নামকরণ করা হয়েছে ‘অশ্বগন্ধ’।
আয়ুর্বেদ মতে, অশ্বগন্ধের অপর নাম বলদা ও বাজিকরি। সুতরাং অশ্বগন্ধা সেবনে যে দেহের যথেষ্ট পুষ্টি হয়, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। এটি বাজিকরি অর্থাৎ কামোদ্দীপক ও রতিবর্ধক। ইন্দ্রিয় শৈথিল্যে এটি একটি শ্রেষ্ঠ ওষুধ।
প্রাচীন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, সে যুগে বিলাসিনী নারীরা অশ্বগন্ধার মূল বেটে দেহে লেপন করতো, তাতে দেহকান্তির উৎকর্ষ বাড়ত, কামভাব জাগ্রত হতো এবং রতিশক্তি বর্ধিত হতো।
অশ্বগন্ধার অন্য কয়েকটি ব্যবহারের কথাও জানা যায়। চক্রদত্ত বলেন, অশ্বগন্ধা গর্ভপ্রদ। ঋতুস্নানের পর বন্ধ্যা রমণী গোদুগ্ধের সঙ্গে সেবন করবে। শোথ রোগে গোদুগ্ধসহ অশ্বগন্ধা বেটে পান করলে উপকার হয়। সুনিদ্রার জন্য অশ্বগন্ধাচূর্ণ চিনিসহ সেব্য। মূল বেটে প্রলেপ দিলে বাত-বেদনা ভালো হয়। একটু গরম করে গ্রন্থিস্ফীতিতে উপকার হয়। ওষুধটি বল, বীর্য, পুষ্টিকারক এবং আগ্নেয় গুণসম্পন্ন। ডা. ডি এন চট্টোপাধ্যায় ওষুধটি বহু ক্ষেত্রে ব্যবহার করে ইন্দ্রিয় দৌর্বল্যে যথেষ্ট ফল পেয়েছেন।
অনেকে অনেক রোগে ভেলকিবাজি দেখিয়ে থাকেন। এটিও ক্রনিক ব্রংকাইটিসে ভেলকিবাজি দেখানোর মতো একটি ওষুধ। রোগী ক্রমাগত কাশতেই থাকে; কিন্তু কফ বা সর্দি ওঠার কোনো নাম-গন্ধও নেই। অশ্বগন্ধার মূল অন্তর্ধুমে পুড়িয়ে (ছোট মাটির হাঁড়িতে মূলগুলো ভরে সরা দিয়ে ঢেকে পুনঃমাটি লেপে শুকিয়ে ঘুটের আগুনে পুড়ে নিতে হয়। আগুন নিভে গেলে হাঁড়ি থেকে মূলগুলো বের করে গুঁড়ো করে নিতে হয়) ভালো করে গুঁড়িয়ে নিয়ে আধা গ্রাম মাত্রায় একটু মধুসহ চেটে খেতে হয়।
Leave a comment
You must be logged in to post a comment.