জ্বরে ভোগার পরে কি করবেন
জ্বর খুবই সাধারণ একটি সমস্যা, কিন্তু এ নিয়ে সবার আছে শঙ্কা। ইনফেকশনজনিত অধিকাংশ রোগের ক্ষেত্রেই জ্বর হচ্ছে অন্যতম উপসর্গ। জ্বর এলে শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা অনুভূত হয়। এ তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে দেহ থেকে পানি ও লবণ এবং ঘাম শ্বাসের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। এর ফলে রোগী পানিস্বল্পতা বা ডিহাইড্রেশনে ভোগেন এবং অধিক বিপাকীয় কার্যকলাপের জন্য দেহ থেকে ক্যালরি বা শক্তি ক্ষয় হয়।
এ সময় শরীরের ওজনও কমে যেতে পারে। ফলে শরীর দুর্বল, অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং খাওয়ার রুচিও কমে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জ্বর সারার পর উপযুক্ত উপসর্গ দেখা যায় বলে একে ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম বলে। এ অবস্থা কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত চলতে পারে। একে জ্বরের কনভ্যালিসিন পিরিয়ড বলে।
কাজেই জ্বর সারার পরের কয়েকটি দিন বা কনভ্যালিসিন পিরিয়ডে অন্তত ৪-৭ দিন সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকা ভালো। এতে ফ্যাটিগ বা অবসাদগ্রস্ততা কিছুটা কাটে।
তবে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন।
১) জ্বরে যেহেতু কম-বেশি স্বাস্থ্যহানি ঘটে, তাই সম্পূর্ণ ভালো হতে পুষ্টিকর খাবারের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত।
২) জ্বরের সময় এবং জ্বর সেরে যাওয়ার পরও জ্বরভেদে প্রায় এক মাস সময় পর্যন্ত পানি, পানীয় (ডালের পানি, ডাবের পানি, বেভারেজ, শরবত, ফলের রস) ও ওরস্যালাইন প্রতিদিন পান করতে হয়।
৩) সুষম খাবার বিশেষ করে প্রোটিন (মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল) ও কার্বোহাইড্রেট বেশি পরিমাণে খেতে হয়। এর ফলে ধীরে ধীরে রুচি ফিরে আসে এবং শরীর স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।
৪) ম্যালেরিয়া ও কালোজ্বরের রোগীদের বেশিরভাগ সময় রক্তশূন্যতা দেখা যায়। এ রোগীদের প্রোটিনের পরিমাণ কমে যায় (হাইপো-অ্যালবুনিমিয়া) এজন্য পায়ে পানি আসে। তাই তাদের পুষ্টিকর খাবার, প্রোটিন ও আয়রনজাতীয় খাবার বেশি খেতে হয়। এ ধরনের জ্বরের রোগীদের অনেক সময় রোগ নির্ণয় হতে দেরি হয় এবং চিকিৎসা চললেও সুস্থ হতে বেশ কয়েক মাস (২-৩ মাস) লেগে যায়।
৫) টিবি বা যক্ষ্মার (ফুসফুস ছাড়াও দেহের যে কোনো অঙ্গে হতে পারে) রোগীরা স্বাস্থ্যহীনতায় ভোগে। চিকিৎসা চলাকালে খাওয়ার রুচি ফিরে আসে, তখন পুষ্টিকর খাদ্য বিশেষ করে প্রোটিন বেশি খেতে হবে। বর্তমানে টিবির ওষুধের মান ভালো, যা তেমন স্বাস্থ্যহানি ঘটায় না, তাই পুষ্টিকর খাবার খেতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
৬) অ্যামিবিক লিভার এবসেস বা লিভারে পুঁজ জমা রোগীদেরও অনেকদিন ধরে গায়ের জ্বরে ভোগে। এদের পায়ে পানি আসতে পারে। প্রোটিন খাওয়ার প্রতি জোর দিতে হয়।
যাদের রাতে জ্বর থাকে বা ফ্লু জাতীয় অসুস্থতা বা ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়, তাদের উপরের ও নিচের ঠোঁটে ফোসকা (অনেকে একে জ্বর-ঠোসা বলে) হতে পারে। একে
হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস ওয়ান বলে, যা হারপিস ল্যাবিলাস ভাইরাস দিয়ে হয়। ৫-৭ দিনে সাধারণত এ ফোসকা শুকিয়ে যায় এবং শুকালে ওই অংশ ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তাই ব্যথা বা অস্বস্তি এড়ানোর জন্য গ্লিসারিন বা লিকুইড প্যারাফিন ঠোঁটের এই অংশে লাগানো যায়।
তবে ফ্লু ছাড়াও মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া ও প্রস্রাবে ইনফেকশন (পায়েলোনেফ্রাইটিস) থেকে এ ফোসকা উঠতে পারে। তাই সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন